এক বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭৫৮ শ্রমিক নিহত: এসআরএস

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কর্মক্ষেত্রে বিগত ১ বছরে সারাদেশে ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় ৭৫৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে একই সময়ে সারাদেশে ৭৭২টি দুর্ঘটনায় ৮৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল। গত বছর থেকে এ বছর কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে । কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার পথে যে সব শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাদেরকেও এই জরিপে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বেসরকারি সংস্থা সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) সম্মেলন কক্ষে নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করে এসআরএস পরিচালিত একটা জরিপ থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ৩৭৯ জন। এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ১২৯ জন, নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছে ৯২ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৭০ জন এবং কৃষিখাতে ৮৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮১ জন; আগুন এবং বিভিন্ন বিস্ফোরণে ৩০ জন; মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছেন ৫০ জন; বজ্রপাতে ৬৯ জন; শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২১ জন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ৭ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন; পানিতে ডুবে ১৭ জন এবং অন্যান্য কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জরিপের পর্যবেক্ষণে, রাস্তার কাঠামো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপরোয়া যান চলাচল ইত্যাদি পরিবহন সেক্টরে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। উৎপাদনশীল খাতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে অদক্ষতা এবং নির্মাণ খাতে কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া, নিরাপত্তাবেষ্টনী ব্যবহার না করে মাঁচার উপর কাজ করা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাবকে চিহ্নিত করেছে এসআরএস ।

জরিপ তথ্য প্রকাশকালে এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্রে এই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ এখানে শুধুমাত্র যে সব নিহতের সংবাদ শুধুমাত্র পত্রিকায় এসেছে তার সংখ্যা কিন্তু অনেক কর্মক্ষেত্রে নিহতের সংবাদ পত্রিকায় আসে না। এবছর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে অনেক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তাদের কেউ এই জরিপে আনা হয়নি।

উল্লেখ্য, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি একটি অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যার লক্ষ্য হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষা করা। এসআরএস বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ, আলোচনা ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। এসআরএস কর্ম দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিনামূল্যে আইনি সহায়তাসহ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে সহযোগিতা করছে।