সারা দেশে গত ডিসেম্বর মাসে ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৯ জন মানুষ মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনায় একইসঙ্গে আহত হয়েছেন ৭৬৪ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৯, শিশু ৭৭। ডিসেম্বরে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৭.৩৮ জন। এই হিসাবে ডিসেম্বর মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ১২.৮৫ শতাংশ।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৭ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে, ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম বরগুনা, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় জেলায়। এই ৩টি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
এছাড়া রেলপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। নৌ পথে ৩টি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত, ৪ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ২১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৬ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৪১.৮৬ শতাংশ ও নিহতের ৩৮.২১ শতাংশ।
সংগঠনটি আরও জানায়, ২১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.২১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৮৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.১৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭২ জন, অর্থাৎ ১৩.৩৫ শতাংশ।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে’তে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়েছে। সারা দেশে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান একসাথে নিহতের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। এর মধ্যে পুরো পরিবার নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪টি। ৭টি অটোরিকশায় ৩১ জন, ৩টি প্রাইভেটকারে ১২ জন, ১টি মাইক্রোবাসে ৫ জন এবং ২টি মোটরসাইকেলে ৬ জন মোট ৫৪ জন নিহত হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য ৩ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১২ জন, সাংবাদিক ৩ জন, প্রকৌশলী ২ জন, আইনজীবী ২ জন, উপসচিব ১ জন, কৃষি কর্মকর্তা ১ জন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১ জন, পবিপ্রবি’র উপ-পরিচালক ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৯ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৪ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩২ জন, ২ জন ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১১ জন, ইমাম-মুয়াজ্জিন ৪ জন, পোশাক শ্রমিক ৫ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৯ জন, রঙ মিস্ত্রি ৪ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৩ জন, প্রতিবন্ধী ২ জন এবং বুয়েট এর ১ জন ছাত্রসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ৬৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৬ জন, বাসের যাত্রী ২১ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩০ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ৩২ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু) ১১২ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-আলমসাধু-টমটম-লাটাহাম্বা) ১৫ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ৯ জন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনাগুলোর ৩৮.২৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪২.৪৬ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১০.৯১ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে এবং ৭.৫৩ শতাংশ শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ০.৭৯ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।