জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের দাফন নিয়ে দলটির রংপুর, রাজশাহী ও আশপাশের জেলার স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের অস্থিতিশীল ও মারমুখী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার নেতাকর্মীরা সোমবার রংপুরে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এরশাদের দাফন রংপুর ছাড়া অন্য কোথাও করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের সামনে-পেছনে মানবঢাল তৈরি করে হলেও তারা এরশাদের মরদেহ রংপুর থেকে নিয়ে যেতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। ইতিমধ্যেই দর্শনায় এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাসে তার কবর খোঁড়ার কাজও শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
জীবদ্দশায় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনও বনানী, কখনও রংপুরে মা-বাবার কবরের পাশে আবার কখনও ঢাকায় নিজ অর্থে জমি কিনে সেখানেই তার দাফনের কথা জানিয়েছিলেন। কবরের পাশে একটি মসজিদ ও দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার জাতীয় পার্টিও এরশাদের স্বপ্ন পূরণে তার বাসভবন পল্লী নিবাসে সেই প্রস্তুতি নিয়েছে। শুধু তাই নয়, জাপা নেতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে রংপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতি এরশাদের শোক ও জানাজায় অংশ নিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নগরের সমস্ত দোকানপাট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানাতে রংপুর শহরের সড়কদ্বীপগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
তবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কথায় মিলছে ভিন্ন চিত্র। তাদের মতে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাবেক রাষ্ট্রপতি ছাড়াও সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। সেনাবাহিনীর বিধান অনুযায়ী কোন সাবেক সেনাপ্রধান মৃত্যুবরণ করলে তার মরদেহ বনানীর কবরস্থানেই দাফন করার বিধান। সরকারের উপর মহল থেকে প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ রয়েছে বনানী কবরস্থানে এরশাদের দাফনের জন্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে তার মরদেহ রংপুর থেকে হেলিকপ্টার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। এ অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের পাশাপাশি নগরজুড়ে উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ দলের অনেক নেতাই বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কবর যদি টুঙ্গিপাড়ায় হতে পারে তবে এ অঞ্চলের প্রিয় নেতার মরদেহ রংপুরে দাফন করতে বাধা কোথায়? সেজন্য দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতার দাফন যেন তার বাসভবন পল্লী নিবাসের লিচুতলায় হয় তার সবরকম প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, রংপুরে এরশাদের দাফন হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। কিন্তু বনানীতে হলে সেই সুযোগ থাকবে না। আর এ কারণেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আরও বলেন, পরিবারের কিছু সদস্য এবং দলের অভ্যন্তরে কিছু নেতার কারণে এরশাদকে রংপুরে দাফন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এরা ‘যখন যার, তখন তার’ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে আমরা যারা ত্যাগী নেতা আছি, আমরা তাদের সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করব।
কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি আরও বলেন, রংপুরে এরশাদের দাফন হলে যাদের গায়ে লাগবে তারাই পর্দার আড়ালে থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে।
সোমবারের সভায় সাবেক সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, গাইবান্ধা জেলা জাপার আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ সরকারসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারে করে রংপুর ক্যান্টমেন্টে এরশাদের মরদেহ নেওয়া হবে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে তার বাসভবন পল্লী নিবাসে। এরপর পার্টি অফিসে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপরই জানাজার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হবে রংপুরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে জানাজা শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে এরশাদের দাফন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক হাসিব আহসান জানান, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে জানাজা শেষে আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে এরশাদের মরদেহ হেলিকপ্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানও জানান একই কথা। তিনি বলেন, মরদেহ নিয়ে হেলিকপ্টার অবতরণ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় পর্যন্ত আমাদের নির্দেশ দেওয়া আছে। আমরা সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, কেউ যদি বাধা দেয়, কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তবে তা প্রতিহত করা হবে।