তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: লেখাপড়া করা হলো না ইমনের
তাজরীন গার্মেন্টেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হন সুইং অপারেটর হানিফ মিয়া ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম (৪১)। এরপর তারা চাকরি ছেড়ে বাড়িতেই আছেন। তাদের ছেলে ইসমাইল হোসেন ইমনের বয়স এখন ১৫ বছর। বড় আশা ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করবে, বাপ-মাকে আর গার্মেন্টসে কাজ করতে দেবে না। কিন্তু ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব নিরাশায় পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে তার লেখাপড়া।
জানা গেছে, সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাক্ষী ইমনের বাবা-মা। আজকের এই দিনে মৃত্যুকে তারা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। তাজরীন দুর্ঘটনায় ১১৩ জন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছিল। আর ইমনের বাবা-মাসহ প্রায় ২০০ জনের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল নিশ্চিন্তপুরের আকাশ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কিশোর ইমন জানান, ঘটনার পর বাপ-মা গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দেন। মাধ্যে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ সংসার চালাতে কিশোর বয়সেই তাকে কাজ করতে হয়।
পাঁচ সদস্যের সংসারে ইমন বড় ছেলে। তার বয়স ১৫ বছর। বাবা হানিফ (৪৮), মা আহত ইয়াসমিন বেগম (৪১)। ছোট ভাই আসিব (১৩) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও ছোট বোন ইমা (১০) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
তাজরীন দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ইমনের বাবা ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। তিনি টুকটাক দিন হাজিরার কাজ করে মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করেন। তার মা কাজ করতে না পারায় বাসায় থাকেন। আর ইমন সেনেটারির কাজ করে সংসার চালান ও ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন।
ইমনের বাবা আহত হানিফ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় কাজ করতে পারছি না। কেউ আমাদের দিকে তাকায় না। আমাদের কাছ থেকে কতবার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে গেল নেতারা কিন্তু কোনো সহযোগিতা পেলাম না। কত অনুদান আসছে কিন্তু আমরা কিছুই পাচ্ছি না।’
ইমনের মা আহত ইয়াসমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমার এক সন্তানের লেখাপাড়া বন্ধ হয়ে গেছে। তার ভবিষ্যৎ তাজরীন নষ্ট করেছে। অন্য সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার পথে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওই ঘটনায় আমার ভাই আনোয়ারসহ চারজন স্বজনকে হারিয়েছি। তারা কিছু অনুদান পেয়েছে কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি।’
আক্ষেপ করে ইমন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমার জীবন নষ্ট করেছে তাজরীন। তবে টাকার অভাবে আমার ভাই ও বোনের লেখাপড়া বন্ধ হোক-সেটা আমি চাই না। তাই সংসারের হাল ধরতেই লেখাপড়া বন্ধ রেখে কাজ শুরু করেছি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন পরিবারটির পুনর্বাসন করে সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ১১৩ জন নিহত ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন। পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে চার্জশিট দেন।
চার্জশিটে তাজরীন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।