‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান’

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া

ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অনুষ্ঠেয় ‘Climate Change and International Collective Action’ শীর্ষক পরিবেশ ও বিকাশ বিষয়ক ১৯ তম এশিয়া প্যাসিফিক সংসদ সদস্যদের সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ডেপুটি স্পিকার বলেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে উন্নত দেশসমূহ ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত পদক্ষেপের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা হিসাবে যৌথভাবে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় সম্মত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তহবিল বৃদ্ধি না করলে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এসময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় আরও বেশি আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

গ্লোবাল জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশকে বিশ্বের ষষ্ঠ জলবায়ু বিপর্যয়ের দেশ উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি হুমকি যা বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীবিকা, খাদ্য সুরক্ষা,পরিবেশ এবং সামাজিক পরিকল্পনার সমস্ত দিককে প্রভাবিত করতে পারে। প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ফলে বাংলাদেশ জিডিপির ২-৩ শতাংশ হারানোর ঝুঁকি নিয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তববাদী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কর্তৃক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। 

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) -এ বাংলাদেশ প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব সম্পদ থেকে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল’ স্থাপনকারী প্রথম দেশ। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ের অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যেও বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের সকলের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এসডিজি) ওপর জোর দেওয়া উচিত, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ বাস্তুসংস্থান এবং জীব বৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং এর সংস্থান সমূহের টেকসই পরিচালনার উপর নির্ভর করে। সংসদ সদস্যরা জলবায়ু চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং এসডিজির সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করতে নেতৃত্ব নিতে পারেন। টেকসই উন্নয়ন কেবল তখনই বাস্তবে পরিণত হতে পারে যখন জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র স্বাস্থ্যকর এবং স্থিতিস্থাপক হয়। এসময় তিনি কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জলবায়ু দ্বারা পরিচালিত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জকে যথাযথভাবে সমাধান না করা গেলে টেকসই বিকাশের লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলো বিভিন্ন দূষণের মুখোমুখি হচ্ছে বিশেষত বর্জ্য অ-ব্যবস্থাপনা, বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, জনসংখ্যার আধিক্য, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ব্যাপক শিল্পায়নের কারণে। এসময় বিভিন্ন দূষণের প্রভাব হ্রাস করতে এবং জাতিসমূহের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহে (এসডিজি ) সাফল্য অর্জনে পারস্পরিক আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডেপুটি স্পিকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের পারস্পরিক শিক্ষার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সম্পর্কে তাদের বিদ্যমান জ্ঞান এবং স্থানীয় অনুশীলনগুলো শেয়ার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদজনক হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সকলের অংশীদারিত্বকে একীভূত করতে একত্রে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে আরও নিরাপদ এবং উন্নত আবাসস্থল করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ন্যায়সঙ্গত বোঝা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানান ডেপুটি স্পিকার।