বাড়ির উঠানে রঙিন মাছের চাষ
রংপুরে বাড়ির উঠানে রঙিন মাছের করে চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রবিউল ইসলাম মৃদুল নামে এক উদ্যোক্তা। প্রতিদিন অন্তত লাখ টাকার বেশি মাছ কেনাবেচা হয় তার বাড়িতে। আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রঙিন মাছের সমারোহ দেখতে তার বাড়ির গেটে থাকে শ’খানেক মানুষের ভিড়।
২০১২ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে নগরীর মেডিকেল পূর্বগেট সংলগ্ন বাড়িটিতে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন মৃদুল। তার চাষ করা মাছ সচরাচর বাজারে দেখতে পাওয়া মাছ নয়। এসব মাছ খাওয়াও যায় না। মূলত শখের বসে যারা অ্যাকুরিয়ামে রাখেন এমন মাছই পাওয়া যায় মৃদুলের বাড়িতে।
এলাকাবাসীর কাছে এই বাড়িটি রঙিন মাছের বাড়ি নামে পরিচিত হলেও বাড়ির সামনে কিন্তু ঝুলানো রয়েছে বাগান বাড়ি লেখা সাইনবোর্ড। গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে যেতেই নজর কাড়বে আচমকা চমক। গোটা উঠানে বসানো রয়েছে ছোট ছোট রিং আর চৌবাচ্চা। এগুলোর কাছাকাছি গেলে মনে জাগবে নানান কৌতূহল। যেন চৌবাচ্চাতে ভাসছে লাল, হলুদ রঙের কাগজের টুকরো। খুব কাছাকাছি থেকে একটু শব্দ করলেই কাগজের টুকরো ভাবা রঙিন মাছগুলো পানিতে এই ডুবছে, আর ভাসছে।
মৃদুলের এই হরেক রঙের মিশালী মাছের সমারোহে রয়েছে কমেট, প্লাটি, সোপটেল, কার্প, গোল্ডফিশ, অরেন্ডা, এলবিনে শার্ক, সিলভার শার্ক, গোড়ামী, ব্লু, গোল্ডেন গোড়ামী, মলি, গাপটিসহ নানা প্রজাতি। মূলত শখের বসে যারা অ্যাকুরিয়ামে রাখেন তাদের কাছে বেশ প্রিয় এসব মাছ।
বাড়ির উঠানে এমন ব্যতিক্রম মাছ চাষের ব্যাপারে রবিউল ইসলাম ওরফে মৃদুল রহমান জানান, লেখাপড়া শেষ করে এলজিইডিতে চাকরি নেন ২০০৪ সালে। এরপর ২০০৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডে। শেষ পর্যন্ত কোন চাকরিতে মন টেকেনি তার। ঢুকে যান ব্যবসা-বাণিজ্যে। মাথায় ছিলো ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা। সেই চিন্তা থেকেই ২০১২ সালে বিভিন্ন প্রজাতির ৩০টি কার্প মাছ দিয়ে শুরু হয় তার রঙিন মাছ চাষের প্রচেষ্টা।
শুরুর দিকে ঢাকার কাটাবন থেকে সংগ্রহ করা কার্প মাছের বেশ কয়েকটা মারা যাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু হাল না ছেড়ে বইপত্র ঘেটে রঙিন মাছের স্বপ্ন পূরণে শুরু করেন প্রচুর পড়াশোনা। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাছ চাষে মনোযোগ বাড়ার সাথে বেড়েছে তার মাছের সংখ্যা।
মৃদুল রহমান জানান, বর্তমানে ২৫টি চৌবাচ্চায় হাজার হাজার মাছ চাষ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ মাছ কিনতে ভিড় জমান তার বাড়িতে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে একেকটি মাছ সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন অন্তত লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা হয় তার বাড়ি থেকে।
সামান্য জায়গা থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন এই সফল উদ্যোক্তা। এমন মাছের চাষ করতে কারো আগ্রহ থাকলে তার কাছ পরামর্শ নেয়ার কথা বলেন মৃদুল।