পুরনো রূপেই পুরান ঢাকা, বহাল কেমিক্যাল কারখানা
চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের অগ্নিকাণ্ডের ট্র্যাজেডির এক বছর হতে চলেছে। এই ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও পুরান ঢাকার অলিগলি থেকে এখনো অপসারণ হয়নি কেমিক্যাল কারখানা।
পুরান ঢাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, আগের মতোই কেমিক্যালের সাথে মানুষের বসবাস রয়েছে। বাসা বাড়িতেই এখনো মজুদ রাখা হচ্ছে রাসায়নিক দাহ্য বস্তু। এতে যেকোনো সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। পরিবেশবাদীরা বলছেন অচিরেই এসব কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে না নেওয়া হলে ঘটতে পারে চুড়িহাট্টার চেয়ে আরও বড় ট্র্যাজেডি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরান ঢাকায় আনুমানিক ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন বা কেমিক্যাল পণ্যের গুদাম রয়েছে। এসবের মধ্যে ১৫ হাজারই রয়েছে বাসা বাড়িতে। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ। ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ ২০০ ধরনের রাসায়নিকের ব্যবসা চলে সেসব গুদামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরান ঢাকার এসব কেমিক্যাল গুদামে রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইলসহ ভয়ংকর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। এসব রাসায়নিক পদার্থ আগুনের সামান্যতম সংস্পর্শ পেলেই ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
এদিকে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা অপসারণের জন্য টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে তার প্রতিফলন তেমন একটা পড়েনি পুরান ঢাকায়। এখনো আগের মতোই দেদারছে চলছে কেমিক্যাল কারখানার ব্যবসা।
আর কত বছর চলবে পুরান ঢাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহীকর্মকর্তা (সিইও) শাহ মোহাম্মদ ইমদাদুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে গত ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। এরপর সেখান থেকে দ্রুত সময়ে রাসায়নিক গুদামগুলো অস্থায়ী ভিত্তিতে সরিয়ে নিতে দুটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়। একটি গাজীপুরের টঙ্গীতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি), অন্যটিঢাকার শ্যামপুরে বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির জমিতে।
অন্যদিকে চুড়িহাট্টার ঘটনার পরে পুরান ঢাকায় একটানা মাস খানেক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে। অভিযানে কেমিক্যাল রাখা বাসাবাড়ির দোকানগুলোকে জরিমানা ও সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা বেশিদিন গড়ায় নি, কিছুদিন পর থেকে আবারো ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল ব্যবসা শুরু করেন। এসব অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আর চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কাছে যে তালিকা ছিল সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকটি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তারা আর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেই। তবে এটা স্থানান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে তারা কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার পর রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দ কুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে ওয়াহিদ ম্যানশনে আগুন লাগে। রাত ১টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে আগুন ভয়াবহ আকারে আশপাশের ৫টি বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট রাত ৩ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে পুড়ে অন্তত ৭০ জন নিহত হন। এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।