মশা তাড়াতে ফ্যানেই ভরসা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে
মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকেঃ সকাল পৌনে ৬টা পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে জনা পনের লোকের সমাগম। করোনার কারণে এমন খরা লক্ষণীয়, অন্য সময়ে নাকি ভোররাতেই লোক সমাগম অনেক থাকে।
এখনও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি। সবেমাত্র একজন স্টাফ এসে ওয়েটিং রুমের তালা খুলে দিয়ে গেলেন। যাত্রী কম দেখে মনে হয় মশারা একসঙ্গে হামলে পড়েছে। একেকজনকে শতাধিক মশা ঘিরে ধরেছে। হালকা শীত হলেও মশা তাড়াতে গ্লাসে ঘেরা কক্ষটির ১৬টি ফ্যান একযোগে চালু করে দিলেন ওই স্টাফ।
সদয় স্টাফটি ভ্রমণকারীদের উদ্দেশে বলে গেলেন, ফ্যানের নিচে বসেন তাহলে মশা কম ধরবে। এ ছাড়া যেন তার আর কিছুই করার নেই। ইমিগ্রেশনগুলোকে বলা হয় রাষ্ট্রের মুখাবয়ব। বিদেশিরা সাধারণত এসব জায়গা ভ্রমণ করেন। তাদের অনেকের হয়তো দেশের অনেক জায়গা দেখার সুযোগ হয় না। এসব স্থান থেকেই দেশ সম্পর্কে তারা একটি ধারণা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যান।
কিন্তু সেই মুখাবয়বের কি করুণ চাহনি। চাইলেই অ্যারোসল স্প্রে করে স্বস্তি নিশ্চিত করা যায়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও হয়তো তার বন্দোবস্ত রেখেছেন। তবে তা ঠিকমতো পালন হচ্ছে কিনা এটা দেখভাল করার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আবার যার দায়িত্ব তিনি হয়তো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। না হলে বাইরে বিক্রি করে দিয়ে টুপাইস হাতাচ্ছেন। না হলে এমনতো হওয়ার কথা না।
ইমিগ্রেশন ওয়েটিং কক্ষে ৪টি টয়লেট রয়েছে। দু'টি পুরুষ দু'টি মহিলাদের জন্য নির্ধারিত। পুরুষের জন্য নির্ধারিত দু'টির একটিতেও না আছে টিস্যু না আছে হ্যান্ডওয়াসের কোনো ব্যবস্থা। যখন জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে এবং প্রাণঘাতী করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তখন এমন চিত্র বড়ই হতাশার।
আশার কথা হচ্ছে ফ্যানের সঙ্গে শীতানুভূতি হলেও মশার দাপট কম লক্ষণীয়। আর স্টেশনটি বেশ পরিচ্ছন্ন বলা চলে। গ্লাসের ভেতর থেকেই দাঁড়ানো লাল সবুজ ট্রেন উঁকি দিচ্ছে।
সাড়ে ছয়টায় শুরু হলো ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। এতক্ষণে যাত্রী উপস্থিতিও কিছুটা বেড়েছে। বেশ কয়েকটি কাউন্টার, ইমিগ্রেশন শেষ করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগলো। যথারীতি কলকাতাগামী মৈত্রী একপ্রেসে আসনও পেয়ে গেলাম। বাংলাদেশের ট্রেনে যাচ্ছি বাড়তি ভালোলাগা কাজ করছে।
বাংলাদেশি ট্রেন ঢাকা থেকে শুক্রবার, রোববার ও মঙ্গলবার কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে ভারতীয় ট্রেন ছেড়ে যায় শনিবার ও বুধবার। সোম ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।
প্রথম দিকে সপ্তাহে চারদিন চলাচল করলেও সম্প্রতি একদিন বাড়িয়ে ৫ দিন করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে যায় এবং কলকাতায় গিয়ে পৌঁছায় বিকেল ৪টায়। ট্রেনের টয়লেটে টিস্যু বিদ্যমান। লিকুইড সাবান নেই তবে লাক্সের বংশধর রয়েছে। অনেক হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
রেলের মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে ৭ হাজার ৬০০ টিকিট এবং কলকাতা থেকে ঢাকা রুটে ৬ হাজার ৬১২টি টিকিট অর্থাৎ মোট ১৪ হাজার ২১২টি টিকিট বিক্রি হয়েছিল। যার পরিমাণ মোট আসনের ৯৪ ভাগ।
উল্লেখ্য, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট ৪৫৬টি চেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪টি এসি সিট (কেবিন) এবং ৩১২টি এসি চেয়ার রয়েছে। এসি সিটের ভাড়া ৩ হাজার ৪৩৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৪৫৫ টাকা।