আম্পানে ভেসে গেছে শেষ আশ্রয়, চোখের পানিতে ফিকে ঈদ আনন্দ

  • রুদ্র আজাদ, কয়রা, খুলনা থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঝুড়ি কোদালের সংগ্রামে শুরু ঈদের দিন, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঝুড়ি কোদালের সংগ্রামে শুরু ঈদের দিন, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঈদের দাওয়াত, কোলাকুলি আর প্রিয়জনের সাথে সব আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি খুলনার কয়রা উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের। ভোরের সূর্য উদয় হতেই নদী ভাঙন রোধ করতে হাজার মানুষের উপস্থিতি কয়রার অন্যতম বড় ভাঙন কবলিত দুই নম্বর কয়রাতে। ঝুড়ি আর মাটিতে কোদালের কোপ দিয়েই শুরু হলো ঈদের দিন।

মাঝে ঈদের জামাতের আয়োজন করে নামাজ পড়ে নিয়েছেন হাজারো মানুষ। এক দিকে বড় হাড়িতে রান্না হচ্ছে সেমাই-খিঁচুড়ি। তাতে হয়তো মিটবে ক্ষুধা, তবে থাকবে না কোনো ঈদ আনন্দ। অন্য পাশে মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে ভাঙন বাঁধার কাজে জনগণকে উৎসাহিত করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন
বাঁধ ভেঙে গেছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

স্বেচ্ছাশ্রমে গত পাঁচদিন নদীর বাঁধ বাধার কাজ করে যাচ্ছেন হাজারো মানুষ। সারাদিন কাজ করে আবার জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় মাটির বাঁধ। তবে জীবনের তাগিদে সকাল থেকেই শুরু হয় বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা।স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়মিত বাঁধ রক্ষার কাজ করেন সালাম শেখ, কাজের ফাঁকে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আম্পান আর নদী ভাঙনের কারণে আমরা সব হারিয়েছি। আমাদের দেখার কেউ নেই। নিজেদের রক্ষা নিজেদেরকেই করতে হয়। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি বাঁধ রক্ষার জন্য। বাঁধ বাঁধতে পারলেই হবে আমাদের ঈদ আনন্দ। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের রক্ষা করুন।

জনসাধারণকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, ছবি: বার্তা২৪.কম

গত বুধবারের (২০ মে) সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী উপজেলার কয়রার ১৫টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র জোয়ারের তোপে ভেসে গেছে শত-শত ঘরবাড়ি। নদী তীরের বাঁধের সাথে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক মানুষের শেষ আশ্রয়টুকুও। ফলে সময়ের আবর্তে ঈদ এলেও আনন্দ পৌঁছেনি এসব গৃহহারা মানুষের কাছে।ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ছোটবড় পাঁচ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। অভ্যন্তরীণ প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ার ভাটার পানিতে আটকা পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। খাদ্য ও খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন
ঝুড়ি কোদালের সংগ্রামে শুরু ঈদের দিন, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ এলাকার মানুষের ঈদ আনন্দ নেই। আম্পানে মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকুও অনেকের নেই। এখনই নদীতে স্থায়ী বাঁধ না হলে ভবিষ্যতে আরো করুণ অবস্থায় পড়তে হবে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষকে।