পিপিই পরা কেবিন ক্রু, খাবারবিহীন ফ্লাইটে অন্য রকম আকাশযাত্রা

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক কিছুই বদলে গেছে। চিরচেনা বহু কিছুই আর দেখা যাবে না। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে প্লেন চলাচল খাতে। পরিবর্তিত রূপে সোমবার (১ জুন) থেকে পুনরায় শুরু হচ্ছে আকাশযাত্রা।

দুই মাসেরও বেশি সময় লকডাউনের পর সোমবার থেকে আবার আকাশপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হলেও পাল্টে যাচ্ছে পুরনো বহু নিয়ম।

বিজ্ঞাপন

এখন কেবিন ক্রদের চিরচেনা রূপে দেখা যাবে না। সবাই পিপিই পরে ফ্লাইটে যাত্রী সেবা দেবেন। যখন তখন আর কেউ কেবিন ক্রকে ডেকে এটা চাই, সেটা চাই- বলতে পারবে না। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে কোনো এয়ারলাইন্সই আর খাবার সরবরাহ করবে না। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিয়ম মেনেই এসব করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে আইকাও’র নির্দেশনা অনুযায়ী একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচক। গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন যাত্রীর সঙ্গে অন্যজনের অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে- সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হলে এটি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে উড়োজাহাজের এক আসনে বসবেন যাত্রী, পাশের আসন থাকবে ফাঁকা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ম মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে সবগুলো এয়ারলাইন্সকে।
প্রথম দিনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া কক্সবাজার, যশোর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) কামরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব যাত্রীদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরতে হবে। পাইলট, কেবিন ক্রুদের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) পরিধান করা, প্রত্যেকটি ফ্লাইটের আগে এয়ারক্রাফটকে জীবাণুমুক্ত করার পর সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ফ্লাইট পরিচালনা, ফ্লাইট সূচিতে ৪৫ মিনিট অন্তর অন্তর ফ্লাইট নির্ধারণ, যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজিং করা, দেড় ঘণ্টার কম সময়ের ফ্লাইটে ইন ফ্লাইট ফুড সার্ভিস বন্ধের নিয়ম মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

নভোএয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মাহফুজুল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, তাদের এয়ারলাইন্সও বেবিচকের সব নিয়ম মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও সরকারের সব নির্দেশনা মেনেই সোমবার থেকে ফ্লাইট চালু করছে। বিমানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোকাব্বির হোসেন জানান, সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা, ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। ‘মোবাইল অ্যাপস’, ওয়েবসাইট, ট্যাপ এজেন্ট এবং বিমানের সেল্স সেন্টার থেকে টিকেট করা যাবে।

বেবিচক বলছে, অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই। উড়োজাহাজের ভেতরে দু’জন যাত্রী পাশাপাশি বসতে পারবেন না। কোনো একটি আসনে একজন যাত্রী বসলে তার পাশের আসনটি ফাঁকা রাখতে হবে। যদি প্রত্যেক সারিতে তিনটি করে মোট ছয়টি আসন থাকে তাহলে প্রতি সারির মাঝের আসনটি থাকবে ফাঁকা। এক্ষেত্রে যদি প্রতি সারিতে দু’টি করে চারটি আসন থাকে, তাহলে একটি আসনে যাত্রী থাকবে, অপরটি থাকবে ফাঁকা। প্রতিটি ফ্লাইটের সামনে অথবা পেছনে একটি সারির আসন খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটের মাঝে কোনো যাত্রী যদি অসুস্থ বোধ করে, তাহলে তাকে ওই সারিতে আলাদাভাবে বসাতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বেবিচকের নির্দেশনা মেনে চললে একটি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আসনের নিয়ম ছাড়াও বেবিচকের উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে এবং অবতরণের পরে প্রত্যেকবার জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাই করবে, এরপরই উড়োজাহাজটি আকাশে ডানা মেলবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদের ব্র্যান্ড নিউ (নতুন) মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস দিতে হবে।

এর আগে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান স্পষ্ট করে জনিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাইকে ফ্লাইট চালু করতে হবে।