করোনায় মৃত মায়ের বৃষ্টিতে ভাঙা কবর ঠিক করছে মারুফ
গত চার মাস ধরে টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগে আক্রান্ত ছিলেন তানিয়া আক্তার। দুই সন্তানের জননী তানিয়া স্বামীসহ পুরান ঢাকায় থাকতেন। টিউবারকিউলোসিসের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এর মধ্যেই হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত হন করোনায়। টানা ১ মাস ১৪ দিন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বুধবার (৩ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গতকালই তানিয়ার মরদেহ দাফন করা হয় রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। দাফনের দিন থেকেই বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফনের যে স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বৃষ্টির পানিতে সেখানে বেশকিছু কবর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দুপুরে তানিয়ার সন্তান ও স্বামীসহ দুইজন স্বজন কবর জিয়ারত করতে আসেন। তারা এসে দেখেন বৃষ্টির পানিতে কবরের কিছু স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু স্থানের মাটিও সরে পড়েছে।
স্ত্রী হারানোর শোক আর দাফনের একদিন পরেই কবরের এই দশা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বামী ওয়ালীউল্লাহ। এমন সময় তানিয়ার আট বছর বয়সী বড় ছেলে মারুফ কবরের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা করছিল।
বাবাকে সান্ত্বনা দিতে না পারলেও মায়ের কবরকে অক্ষত রাখতে নিজেই পাশ থেকে মাটি নিয়ে অল্প অল্প করে জুড়ে দিচ্ছিল ভাঙা স্থান। ছোট হাতে মুঠো ভরে মাটি নিয়ে কোনোরকমে ছোট গর্ত গুলো বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল মারুফ।
রায়েরবাজার কবরস্থানে এমন শোক ও হৃদয়বিদারক চিত্র এখন নিয়মিত ব্যাপার উল্লেখ করে তানিয়ার স্বজন বলেন, টিবি রোগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তানিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিয়ে সেখানেই মারা যান। কাল থেকে আজ পর্যন্ত যতবার এখানে এসেছি ততবারই এমন চিত্র চোখে পড়েছে। এগুলো সহ্য করার মতো না। ১১ মাসের আরো একটা ছেলে রেখে গেছেন তানিয়া, ভাবছি এই দুধের শিশুটার এখন কী হবে?
রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের গোড় খোদক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এই কবরস্থানে করোনায় মৃত ৩৪৭টি লাশ দাফন করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে দাফন কার্য চলে।