ভার্চুয়ালে ঝুঁকছেন গৃহশিক্ষকরা
মতিউর রহমান মিন্টু, পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজের খরচ মেটাতে টিউশন করেন। করোনার শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা পর রাজশাহী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালীতে চলে আসেন। কিছুদিন টিউশনি বন্ধ রেখেছিলেন। করোনাকাল দীর্ঘ হওয়ায় টিউশনির জন্য বেছে নিয়েছেন ভার্চুয়াল মাধ্যম। বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনের মাধ্যমে টিউশন করছেন। শুধু মতিউর রহমান মিন্টু নয়, অনেক গৃহশিক্ষক করোনাকালীন সময়ে এ পথ বেছে নিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বদলে গেছে পৃথিবীর স্বাভাবিক রুটিন। মানুষের জীবনচক্রে যেমন এসেছে পরিবর্তন তেমনি পরিবর্তন এসেছে কাজের পদ্ধতিতে। এসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ব্যবহারে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিরাপদে কাজ করছে নানা পেশার মানুষ। এ মিছিলে শামিল হয়েছেন গৃহশিক্ষকেরা। গৃহশিক্ষকদের একটা অংশ অনলাইনের মাধ্যমে এখন পাঠদান করছেন।
কয়েকজন গৃহশিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভার্চুয়ালের জন্য বেশি কিছু অ্যাপস থাকলেও সহজলভ্য ও ব্যবহারের সুবিধার্থে ম্যাসেঞ্জার, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি অ্যাপস ব্যবহার করছেন তারা। শহরাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা থাকলেও গ্রামে এ সুবিধা নেই। যার জন্য নির্ভর করতে হয় মোবাইল ডাটার ওপর। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ভিডিও কল ডিসকানেক্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাঠদানের ব্যাপারে মতিউর রহমান মিন্টু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসময়ে অনলাইনে টিউশনির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছে।
বর্তমান সময়ে বিবেচনায় অনলাইনে টিউশনি ইতিবাচক দিক থাকলেও অন্যান্য সময়ের জন্য ঠিক হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সরাসরি উপস্থিত থেকে আনন্দের সাথে পাঠদান করানো যায়। কিন্তু অনলাইনে তা সম্ভব হয় না। সরাসরি উপস্থিত থাকলে পড়ানোর পাশাপাশি স্টুডেন্টদের মোটিভেশন দেওয়া যায়। কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে তা করা যায় না। অনলাইনে টিউশনির কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমি গ্রামে থাকি অন্যদিকে শিক্ষার্থী শহরে (রাজশাহী) থাকে। এতে নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা যায়, মাঝে মধ্যে নেটওয়ার্ক ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ ইসলাম থাকেন ধানমন্ডিতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় তিনিও অনলাইনের মাধ্যমে টিউশনি করছেন।
জাহিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর গ্রামে চলে আসি। এ সময়ে আমার স্টুডেন্ট ও তার পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগোযোগ ছিল। এর মধ্যে কয়েকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করা হলো। এসময় অনেকেই বাসায় থেকে অফিস করছে, অনেকে অফিসিয়াল মিটিং অনলাইনে করছে, কিছু কিছু রাজনৈতিক প্রোগ্রামও অনলাইনে হয়, কোর্টও বসে অনলাইনে। এর পরই আমার স্টুডেন্টের মা ফোন করেন। তিনি অনলাইনে পড়াতে বলেন। এরপর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় হয় পড়ানো শুরু করেছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনার সাথে কিছুটা হলেও ছেদ ঘটেছে শিক্ষার্থীদের। এ সময়ে তাদেরকে ভার্চুয়ালের মাধ্যমে পড়াশোনা সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখছে গৃহশিক্ষকরা। এতে খুশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। করোনার সংকটকালীন সময়ে ভার্চুয়ালে টিউশনি করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আগের মতো সরাসরি উপস্থিত থেকে পাঠদান করাবেন বলে জানান গৃহশিক্ষকরা।