উপ-নির্বাচন: আ.লীগের নৌকা পাবেন তিনজন প্রত্যাশায় ৯৪ জন

  • মো আরমান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আসন্ন উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। নৌকা প্রতীক পেতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছে স্থানীয় কর্মী থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। এমনকি এই দৌড়ে শামিল হয়েছেন ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ জীবনে রাজনীতি করেননি এমন লোকও। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সবাই নৌকায় উঠতে চান। সংসদের শূন্য ৩ আসনে উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তিনজন। কিন্তু দলটি থেকে মনোনয়ন চাইছেন ৯৪ জন প্রার্থী।

করোনাভাইরাস এবং রমজানকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকে এই দৌড় ঝাপ শুরু হলেও এখন চলছে প্রার্থী তা নিশ্চিত করার লড়াই। ঈদের আগে মানবিক সহায়তার মধ্যে নিজেদের প্রচার প্রচারণা সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ঠেকেছে অনেকটা লবিং তদবিরে। যেভাবেই হোক নৌকার টিকিট তাদের চাই-ই।

বিজ্ঞাপন

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত ৪ জুন থেকে আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ এবং সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করি এবং আজ বৃহস্পতিবার ১০ জুন আমাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়। এর মধ্যে ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ এবং সিলেট-৩ আসনে গত এক সপ্তাহে ৯৪ জন  মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন  ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩৪ জন, কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ জন এবং সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন।

সায়েম খান আরও জানান, মঙ্গলবার চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল এবং বিএনপি নেতা ইখলাস উদ্দিন মোল্লা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আমাদের অফিসে আসেন কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের কোন কর্মী বা সদস্য পদের কোন কাগজ দেখাতে না পারায় তাদের পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে এই তিন আসনের উপনির্বাচনে আমাদের ৯৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের গত ৪জুন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  বলেন, “এবার মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক প্রার্থীর সংখ্যা অনেক। খুব একটা অসুবিধা নেই, এই কথা মনে করে অনেকই আবার প্রার্থী হচ্ছেন। পান আর না পান প্রার্থী হতে চান। কারণ বিএনপি নেই শুনেছে। সেই জন্য প্রার্থিতার দৌড়ও বেড়ে গেছে। নেত্রীর সাথে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সাধারণ একটি গাইডলাইন তিনি দিয়েছেন। সেটা হলো ‘আমি ত্যাগী ও পরীক্ষিত কাউকে মনোনয়ন দিবো। যারা জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং দুঃসময়ে ছিলেন। এমন একটি ধারণা তিনি আমাকে দিয়েছেন।

তবে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, বা কার হাতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের নৌকার বৈঠা? এমন প্রশ্ন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে দলের জন্য যারা সব সময় কাজ করেছেন, নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় মানুষের পাশে ছিলেন, গণভিত্তি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন; এমন প্রার্থী খুঁজে মনোনয়ন দেয়া হবে।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাজনীতি যারা করেন তাদের মধ্যে  অনেকের মনে একটা স্বপ্ন থাকে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা করবেন। এই জন্য তাদের ভিতরে নির্বাচন করার একটা আগ্রহ থাকে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর বর্তমানে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তির তেমন কোন অবস্থান নেই। ফলে অনেকের ভিতরে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, মনোনয়ন পেলে তারা হয়তো সংসদ সদস্য হতে পারবেন।‘বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর মনোনয়ন প্রত্যাশার কারণ একটাই। মাঠে আমাদের শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় তাদের মধ্যে ধারণা হয়েছে মনোনয়ন পেলেই হয়তো জয়লাভ করবে। আমাদের সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতাও হয়তো আছে। এ কারণেই হয়তো এ পর্যায়ে চলে এসেছে।’

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ’আওয়ামী লীগ বড় দল। যোগ্য লোকের সংখ্যা অনেক বেশি আছে। মনোনয়ন তো চাইবেই। যোগ্য, ত্যাগী, জনপ্রিয় ও দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি যোগ্যকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।’

‘বরাবরের মত প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। বোর্ড সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা যাকে দেবেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি নিশ্চয় যোগ্য লোককেই মনোনয়ন দেবেন।

ঢাকা-১৪ সহ তিন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১২ জুন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।আর এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে কে কে নৌকার টিকেট নিয়ে উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদে যেতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের তিনটি আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল ১৪ জুলাই। তারিখ পরিবর্তন করায় এখন এই আসনে ভোট হবে ২৮ জুলাই।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, শূন্য হওয়া তিন আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমার শেষ তারিখ ১৫ জুন। ১৭ জুন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৩ জুন পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

উল্লেখ্য, ঢাকা-১৪ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হক গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ এবং ২০১৪ সালের দশম সংসদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৃত্যুকালীন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন আসলামুল হক।

সিলেট-৩ সংসদীয় আসন গঠিত দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে।  এখানে টানা তিনবার নির্বাচিত হন প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এই আসনটি মূলত জাতীয় পার্টির দুর্গ। যার কারণে এখানে মহাজোটের শরিক জাতীয় প্রার্টিরও প্রার্থী সক্রিয় রয়েছে। গত ১১ মার্চ মাহমুদ সামাদ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নবম ও দশম সংসদেও এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কুমিল্লা-৫ আসনটি বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলা দুটি নিয়ে গঠিত। এই আসনে দলের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আবদুল মতিন খসরু।

তিনি গত ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-৫ আসনটি ওই তারিখে শূন্য হয়েছে।