বিশ্লেষণ: বিএনপি কি অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে!

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিতে চলমান অবরোধের মধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

অথচ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অব্যাহতভাবে হরতাল-অবরোধ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ছিল নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ তৈরি করা। এই চাপের মাধ্যমে তারা কমিশনকে তফসিল পেছাতে বাধ্য করাও একটি লক্ষ্য ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো চাপই কাজে আসেনি কিংবা সরকারের তরফ থেকেও সংলাপের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ভাবা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র শর্তহীন সংলাপে বসতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে দেওয়া চিঠির পর কোনো একটি উদ্যোগ হয়তো নেওয়া হতে পারে।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লু’র চিঠি পৌঁছে দেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এখন আর সংলাপের সময় নেই।

সত্যি বলতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের পর সরকারের মধ্যে একটি অস্বস্তি ছিল এবং সরকার যে একটি চাপে রয়েছে তাও সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের কথা-বার্তায় বোঝা যাচ্ছিল। পরবর্তীতে ২৮ অক্টোবরের বিএনপি’র সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়া ও দলটির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ধরপাকড়ের মাধ্যমে সরকারও কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়ে দেয়। এরপর থেকে বিএনপি একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছিল, বিএনপির এই আন্দোলনের মাঝে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন সরকারকে আরও বেশি বেকায়দায় ফেলেছে। শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও হুমকি দেওয়া হয়। তবে কোনো কিছুই গায়ে মাখেনি সরকার।

এই অবস্থায় বিএনপির পক্ষে কি নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে পুঁজি করে বিএনপি যেমন সরকারকে একটি কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিল, তেমনি সরকারও এটিকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে একটি চাপে ফেলার পরিকল্পনা করে।

বলা হচ্ছে, বিএনপি সমাবেশ থেকে হামলা করে পুলিশ হত্যা করা, ভাঙচুর ও সহিংসতার বিষয়টি উল্টো সরকারকে প্রধান বিরোধী দলটির ওপর ধরপাকড় করার সুযোগ এনে দেয়। আর বিএনপিও পরদিন থেকে তাদের সমাবেশ পণ্ড করা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার একের পর এক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে এমনভাবে গ্রেফতার শুরু করে। যার ফলে বিএনপির আন্দোলন আর জমাট বাধতে পারেনি।

যে কারণে মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বহু নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর বিকল্প কি উপায়ে আন্দোলন চাঙ্গা করে জনমানুষকে সম্পৃক্ত করা যাবে তা বুঝে ওঠার আগেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

তফসিলের পর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি সমমনা আরও কিছু দল নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করলেও নির্বাচনে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। তারা বলছেন, আরও বেশ কিছু দলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিয়ে আসতে সরকার চেষ্টা করছে। এতে তারা সফলও হবে হয়তো।

সোমবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতালের পর আরও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। এতে করে বিএনপির যে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের যে হারে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের পক্ষে পুলিশি গ্রেফতার এড়িয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকা দূরুহ। এখন দেখার বিষয় আন্দোলনের যে কর্মসূচি বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে তাতে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করে সরকারকে সত্যিকারভাবে চাপে ফেলতে পারে কিনা।