২৬ বছর পর কারামুক্ত হলেন ‘শিবির নাছির’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি- বার্তা২৪.কম

ছবি- বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রামের আলোচিত শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘শিবির নাছির’ ২৬ বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। এ মসয় তার অনুসারীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। পরে একটি মাইক্রোবাসে চড়ে নাছির লাল দিঘীর পশ্চিম পাড় হয়ে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

মুক্তির বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, নাছির উদ্দিন চৌধুরী সন্ধ্যা ৭টা ১০মিনিটে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেছেন। 

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নাছির সর্বশেষ কারাভোগে থাকা একটি মামলায় জামিন পান। ওই চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচার হালিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করা হলে আদালত মঞ্জুর করেন।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করে নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমদ আনুসারী বলেন, নাছির উদ্দিন এতদিন ফটিকছড়ির একটি হত্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আদালত তার ওই মামলায় জামিন দিয়েছেন। তবে সেদিন বিকেল হয়ে যাওয়ায় কারামুক্তির জন্য যে কাগজ বা অফিসিয়াল কাজ সেটি করা সম্ভব হয়নি। এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিন বন্ধ ছিল। রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তির বাকি কাজ শেষে বেরিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, নাছির যখন গ্রেফতার হয়েছিল, তখন তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা ছিল। তার ফটিকরছড়ির তিনটি হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে একটি ২০২৩ সালে আরও একটিসহ দুটি মামলায় জামিন পান। তিনি সবমিলিয়ে ২৬ বছর ৪ মাস চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় গুম, খুনসহ প্রায় ৩৬টি মামলা ছিল। সাক্ষী না পাওয়ায় এর মধ্যে ৩১টি মামলায় খালাস পান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা, হাটহাজারী ট্রিপল মার্ডার, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে জমির উদ্দিন হত্যা মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এর বাইরে কয়েকটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তার সাজাও হয়। এর মধ্যে দুটির মামলার সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন তিনি।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন এলাকায় নাছিরকে ধরতে একবার বড় অভিযান চালানো হয়। সে সময় নাছিরের লোকজন ভারী অস্ত্র দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক করেছিল। সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে তখন প্রায় দেড় হাজার গুলি ছোড়া হয়। পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। একই বছরের শেষের দিকে আবারও সেখানে অভিযান চলে। ওই অভিযানে ৭ থেকে ৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় বিডিআর সেলিমসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলে আবারও ফসকে যান নাছির।

সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল একটি বড় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেলের ছাত্রাবাস থেকে নাছিরকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামে আর্মসভিত্তিক ক্যাডার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন নাছির। তার সংগ্রহে ছিল একে ৪৭, এসএমজি, এলএমজিসহ নানা অত্যাধুনিক অস্ত্র।

নাছির চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের হিম্মত মুহুরী বাড়ীর মরহুম নুর হোসেনের সন্তান।