রাজার বেশেই বিদায় ডি মারিয়ার

  • শাকিল আহমেদ শান্ত, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

‘আমি যা চাইতে পারতাম, জীবন তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছে আমাকে।’ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ইন্ট্রাগ্রামের একটি পোস্টে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন আনহেল ডি মারিয়া। জীবন আসলেই তাকে যেন দিয়েছে অনেক কিছু। ২০০৮ অলিম্পিক ফাইনাল, ২০২১ কোপা ফাইনাল, ২০২২ ফিনালিসিমা এবং ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনাল, সবগুলো ম্যাচেই গোল করেছেন ডি মারিয়া এবং আর্জেন্টিনা জিতেছে সেই সবগুলো ম্যাচেই। তাতেই তো এমন তকমা লেগে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা ফাইনালে এবং সেখানে ডি মারিয়া গোল করলে আলবিসেলেস্তেরা যেন হারতেই পারেনা! 

ডি মারিয়ার শেষ ম্যাচটিও ছিল ফাইনালের মঞ্চে। তবে এবার আর ফাইনালে কোনো গোল করলেন না এই ৩৬ বছর বয়সী তারকা ফরোয়ার্ড। তবে তিনি বিদায়টা নিলেন রাজার বেশেই। তাকে সিংহাসনে তুলে বিদায় দিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ১১২ মিনিটে ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন লাওতারো মার্তিনেজ। সেই গোলেই আর্জেন্টিনা জিতল রেকর্ড ১৬তম কোপা শিরোপা এবং দলের হয়ে প্রায় সব জেতা ডি মারিয়া বিদায় বললেন আকাশী-সাদার দলটিকে। 

বিজ্ঞাপন

আর্জেন্টিনার হয়ে ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন ডি মারিয়া, সেখানে করেছেন ৩১টি গোল। 

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ডি মারিয়ার শুরুটা ২০০৮ সালে। তাকে পুরো বিশ্ব চেনার আগেই যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমা গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে আলবিসেলেস্তেদের হয়ে জেতেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ। অবশ্য এতে তারকা খ্যাতি পাবার মতো কিছু ছিল না। 

বিজ্ঞাপন

ডি মারিয়ার ফাইনালের গোল করতে ‘মরিয়া’ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু ২০০৮ সালেই। অলিম্পিকের ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে নামে আর্জেন্টিনা। মেসি, অ্যাগুয়েরো, রিকেলমের মতো তারকাদের নিয়ে সাজানো দলে জয়সূচক গোলটি এলো ডি মারিয়ার পায়ে। ওই একমাত্র গোলেই আর্জেন্টিনা জিতেছিল ম্যাচটি। এবং ২০ বছর বয়সেই ডি মারিয়ার বাহুতে চড়ে বসল ‘তারকা’র ব্যাচ।  

শুরুর দিকে অনেকটা আন্ডাররেটেড কোটায় থাকা এই ফুটবলার ডান পায়ে নিতে পারতেন না কোনো শট। বয়স গড়িয়ে খেলায় পূর্ণতা পেয়েও যেই দুর্বলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ডি মারিয়া। তবে তার বাঁ পায়ের জাদুতে তিনি যা করে দেখিয়েছেন তার জন্য একটা স্যালুট তিনি পেতেই পারেন।  

২০২১ কোপার ফাইনাল। ২৮ বছর ধরে শিরোপাহীন আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ঘরের মাঠের ব্রাজিল। ম্যাচ সেই ঐতিহাসিক মারাকানায়। সবাই তো ধরেই নিয়েছিল নেইমারদের সামনে এই আর্জেন্টিনার জয় সম্ভবই নয়। এমন তকমা পাওয়ার কারণটাও ছিল বটে। ২০১৪ সালের ফাইনাল হার দিয়ে সেই যে শুরু। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপার ফাইনালেও হার এবং ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে তো শেষ ষোলোতেই বিদায়। সব মিলিয়ে আলবিসেলেস্তেদের জয়ে নজর ছিল না কারও। তবে ১১ জুলাই ২০২১ সালের সেই ফাইনালের ২২তম মিনিটে রদ্রিগো ডি পলের লম্বা পাস এবং ব্রাজিলের ডিফেন্ডারের ভুল বল পেয়ে যান ডি মারিয়া এবং বিশ্বের অন্যতম গোলরক্ষক আলিসনের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে বল সোজা জালে। 

ডি মারিয়া সেই আলতো ছোঁয়াতেও যে শিরোপা খরা কাটানোর শুরু আর্জেন্টিনার। এরপর ২০২২ ফিনালিসিমাতেও ইতালিকে হারাল তারা, সেখানে গোল ডি মারিয়ার এবং বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল। ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির লম্বা এবং একেবারেই হালকা শরীরের ফুটবলার বনে গেলেন ‘ম্যাচ অব দ্য ফাইনাল।’ 

নিজের শেষ ফাইনাল জয়ের ম্যাচে আর গোল করতে পারলেন না ডি মারিয়া। তবে ফাইনালে আর্জেন্টিনা উঠলেই ডি মারিয়ার ২০০৮, ২০২১ এবং ২০২২ সালের স্মৃতি ফেরাতে আপনি বাধ্য। যদি আর্জেন্টিনা সেসব ফাইনালে হেরেও যায় আপনি সেই ম্যাচগুলোর হাইলাইটস দেখে আপনি এই কথাগুলোই বলবেন, 

ওহে ডি মারিয়া তোমাকে কুর্নিশ, 

ফাইনালে তুমি থাকলে এই আর্জেন্টিনার নামে দেওয়া যায়নি সালিশ।