পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যেন কাজে লাগানো যায়, সে প্রচেষ্টা চালানো উচিত। কেননা এ মাস আমলের মাস, ইবাদতের মাস, এটি ইবাদতের বসন্তকাল। এখানে রমজানের বিশেষ কিছু আমল উল্লেখ করা হলো-
কোরআনে কারিম তেলাওয়াত
রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...।’
ইমাম শাফেয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজানে প্রতিদিন ২ বার কোরআন খতম করতেন। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর চার পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করলে দৈনিক ১ পারা তেলাওয়াত শেষ হবে- ইনশাআল্লাহ।
এ ছাড়া রমজান মাসে একজন অপরজনকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম আমল।
নিয়মিত নামাজ আদায়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা। কোনোভাবেই যেন জামাত না ছুটে, সেদিকে খেয়াল রাখা।
তারাবির নামাজকে গুরুত্ব দেওয়া
তারাবি পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবি পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে তারাবি আদায় করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ -বোখারি শরীফ: হাদিস- ২০০৯
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া
রমজানে কিয়ামুল লাইল করার কথা আছে। কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের নামাজ। তারাবির নামাজ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে, তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের পরামর্শ হলো- সাহরি খাওয়ার জন্য দেরি করে না উঠে একটু আগেভাগে উঠা। ধীরে ধীরে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় শেষে দোয়ায় কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।
সদকা বা দান
প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরও বেড়ে যেত।’ –সহিহ মুসলিম: হাদিস- ৩২০৮
সুতরাং রমজানে হাত খুলে দান করুন। এতে আপনার রিজিকে যেমন বরকত হবে, তেমনি সওয়াব হবে অফুরান।
ইফতার করানো
রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের মতো রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। এতে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ –আহমাদ: হাদিস- ২২৩০২
রমজানে দরিদ্রদের ইফতার কিনে দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে আশেপাশের দরিদ্রদের- যারা লজ্জার কারণে মানুষের কাছে হাত পাততে পারে না। তাদের খোঁজ নিন, চেষ্টা করুন তাদের বাসায় কিছু ইফতার পৌঁছে দিতে। আপনি যদি কাউকে একটা খেঁজুর দিয়েও ইফতার করান, আপনার আমলনামায় প্রচুর সওয়াব লেখা হবে।
তওবা ও ইস্তেগফার করা
সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব। আর এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়।
কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
এ মাসে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সে জন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসের প্রতিরাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে আহ্বান করতে থাকে যে হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী, তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। এ মাসের প্রতিরাতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্যা লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ –সুনানে তিরমিজি: হাদিস- ৬৮৪
এ ছাড়া সাহরি দেরিতে এবং ইফতার দ্রুত করা। সেই সঙ্গে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা, অধিক হারে নেক আমল করা, বেশি বেশি জিকির করা, লাইলাতুল কদর তালাশ করা, তাকওয়া অর্জন করা, ফিতরা দেওয়ার পাশাপাশি গোনাহের সব কাজ ছেড়ে দেওয়া।