‘নির্বাচন সুষ্ঠু’ করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও কমিশনে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি উপলক্ষে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা/ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেছে কমিশন।
সভায় মাঠপর্যায় থেকে বক্তব্য রাখেন ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ২০ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। তারা কমিশনের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তাদের বিভিন্ন চাহিদা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। পাশাপাশি প্রস্তুতির কথাও তুলে ধরা হয়।
সভায় উপস্থিত একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। ভোটার তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে বলা হয়, যাতে কোন ধরনের ত্রুটি না থাকে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের বিষয়টি আলোচনায় উঠলে কমিশন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে সকল সমস্যা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশিসমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলা হয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা পার্বত্য অঞ্চলের কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের পক্ষ থেকে রাঙামাটি, বান্দরবানসহ সকল পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আটটি বিভাগে আলোচনা সভা করা হবে। তখন এসব বিষয় উপস্থাপনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভার এক পর্যায়ে কর্মকর্তারা নির্বাচনে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিতের দাবি জানালে কমিশন সে বিষয়টি মূল্যায়ন করবে বলে আশ্বাস দেন।
সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক। তাদের নির্বাচনের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি লক্ষ্য করেছি। তিন চারটি বিষয়ে তাদের মন্তব্য চেয়েছি। একটা হলো ভোটার তালিকার সিডি, ভোটকেন্দ্রের অবস্থা। এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানে কাজ করছে। দুর্গম এলাকায় কোথায় কিভাবে ভোটের মালামাল নেয়া যাবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা খারাপ, সেখানে বাড়তি ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি তারা অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সভা সূত্রে জানা গেছে, সভার শুরুতেই ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ হতে হালনাগাদ ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার তত্বাবধানে জেলা নির্বাচন অফিসার এবং উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিসারগণ চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে সিডির সঠিকতা সম্পর্কে প্রত্যয়ন প্রেরণ করবেন। মনোনয়পত্র বিতরণের সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রদানের জন্য ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত কার্যক্রম নির্বাচনের সময়সূচি জারির পূর্বেই সম্পন্ন করতে হবে।
ভোটাকেন্দ্রের জন্য সকল যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ ও সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত এবং প্রশিক্ষণ আয়োজনের বিষয়টিকে গুরুত্বে দেয়ার নিয়েও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালার আলোকে নির্বাচনের সময়সূচি জারির পূর্বেই সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার/ জেলা নির্বাচন অফিসার বিভিন্ন অফিস/ প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা সংগ্রহ করবেন। সংগৃহিত তালিকা সময়সূচি জারির পর পর পদ্ধতিগতভাবে রির্টার্নিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর এবং অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ভোটগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার জন্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তথ্য প্রেরণ করতে হবে।
নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, বিতরণ ও বাজেট প্রণয়ন বিষয় কর্মকর্তাদের বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ১০ ধরনের নির্বাচনি দ্রব্যাদির মধ্যে গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ, মার্কিং সিল, অফিসিয়াল সিল, ব্রাস ও অমোছনীয় কালির কলম ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। স্ট্যাম্প প্যাড, ব্যালট বক্সের লক ও লালগালা চলতি মাসের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে। নতুন অন্তর্ভুক্ত মালামাল (ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট ও পিনসহ স্ট্যাপলার) মেশমিন) সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মনোনয়ন ফরমসসহ মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই সংক্রান্ত প্রাথমিক নির্বাচনি ফরম, প্যাকেট মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচনের সময়সূচি জারির পূর্বে মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে। এছাড়া স্থানীয় মালামাল সংগ্রহের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
সবশেষে নির্বাচনের বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে আলোচনা হয়। সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের বলা হয়, নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ হতে ব্যয় প্রক্কলন, বিস্তারিত দফা- উপদফাওয়ারি ব্যয় বিভাজন ও হার নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্যয় বরাদ্দের হার নির্ধারণ, দুর্গম/ বিশেষ এলাকা বা অনুরূপ শর্ত এর অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবনা প্রস্তুতসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায় হতে তথ্যাদির প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজকের বৈঠকে মূলত মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসময় তারাও কিছু মতামত তুলে ধরেছেন।