প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালো সংসদ, ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে জাতীয় সংসদ। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনাও করেছেন অনেক সংসদ সদস্য।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) রাতে জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধি অনুযায়ী আনীত প্রস্তাবের (সাধারণ) নোটিশের উপর আলোচনা শেষে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার প্রস্তাবটি উত্থাপণ করলে তার সমর্থনে ৪২ জন মন্ত্রী-এমপি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় কয়েকজন বক্তা বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নীতিহীন জোট করায় নিন্দাও জানান।
ধন্যবাদ প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বলিষ্ট নেতৃত্ব, দর্শন-চিন্তা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও সমাদৃত হওয়ায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সির দেয়া ‘হিউম্যানটারিয়ান এওয়ার্ড’ এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের দেয়া ‘স্পেশাল ডিসটিংশান এওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছেন। এ সকল সন্মাননা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানানো হোক।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি কোন উসকানিতে পা না দিয়ে কূটনীতিতে সফলতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমর্থন সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংসদ ভাঙবে কেন। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ড. কামাল বলেছেন তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে ঐক্য করি নাই। যে দলের ভোরপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়া সে দলের সঙ্গে ঐক্যের মানে কি। তারেক জিয়া খুনের আসামি, গ্রেনেড হামলার আসামি তার সঙ্গে ঐক্যের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, ড. কামাল হোসেন খুনি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন। যা নিন্দনীয়। যারা
বেগম মতিয়া চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক নানা ধরনের খেলা ধুলা। ড. কামালের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ঐক্যজোট কোন কাজে লাগবে না। জাতীর সঙ্গে ভণ্ডামী করে আপনারা যে কুয়াশার জাল সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন তা কখনো সফল হবে না।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২৮ বছর দেশ অবহেলিত ছিল। দেশের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। যদি এই ২৮ বছর শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতেন তাহলে দেশ আজ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো। আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ২৯টি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যা অনন্য। অপর পক্ষে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জীবনে একটি খেতাব তো দুরের কথা বরং এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে জেলে। তার আমলে দেশ সন্ত্রাসী ও দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বর্তমানে সারা পৃথিবী রক্তাক্ত। সৌদি আরব, ইসরাইলসহ সব দেশে অস্থিরতা। কিন্তু শেখ হাসিনা এ অঞ্চলকে শান্ত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। এ নাফ নদী বারে বারে রক্তাক্ত হয়েছে। আমাদের নিজেদের কত সমস্যা, তারপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীকে যে মহিয়সী বলা হয় তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া উদারতার এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি তলিয়ে যাওয়া দেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত করেছেন। বার বার স্বাধীনতা বিরোধী জোট দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে। নতুন করে ঐক্যফ্রন্ট তৈরি করা হয়েছে, যারা গণতন্ত্র ও আদর্শকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। যারা জাতীর পিতাকে হত্যা করেছিল তাদের সঙ্গে জোট করায় তিনি কামাল হোসেনকে নিন্দা জানান।
ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিশ্ব আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবিকতার প্রতীক আর যোগ্য নেতৃত্ব বলছে আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অপরাধ, লুণ্ঠন ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীর নিদর্শন। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার দাবি জানান।
জোটের তীব্র সমালোচনা করে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তারা কোন রবার্টের অপেক্ষায় আছেন, যারা তাদেরকে অবৈধপথে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে? এমপি বাহাউদ্দীন নাসিমও বিএনপি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের জোটকে এক অশুভ ইঙ্গিত বলে অভিহিত করেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেবার জন্য কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী এক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রায় কিছু মানুষের মনে জ্বালা যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছে।
আরো বক্তব্য রাখেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ফজিলাতুনন্নেসা বাপ্পি, জয়া সেনগুপ্ত, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মনিরুজ্জামান ইসলাম, বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম, সাবিনা আক্তার তুহিন প্রমুখ।