কাঁদলেন রাজু, কাঁদল আওয়ামী লীগ
রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে ওই আসনটি শূন্য হয়।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা ৩৮মিনিটে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের নিচে সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই ঘোষণা দেন তিনি।
অশ্রুসিক্ত চোখে দল মনোনীত এই প্রার্থী বলেন, ‘এই আসনটি শূন্য হবার কারণে রংপুরের মানুষের মাঝে একটা আশার আলো তৈরি হয়েছিল। সারাদেশের মতো রংপুরেও উন্নয়নের ধারা শুরু হবে এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমরা সেই আশাতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে নৌকা মার্কার প্রার্থীও নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের রংপুরবাসীর দুর্ভাগ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে বারবার ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। রংপুরের জনগণ ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছে। একটা দলের রাজনীতির জন্য আমরা মঙ্গল থেকে পিছিয়ে। আজও আমরা তার শিকার। অপরাজনীতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রধানমন্ত্রী সেই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চান। আমরা একদিন সফল হব।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ। রংপুরের মানুষ, মিডিয়া এবং দলের নেতাকর্মীরা আজ উন্নয়নের স্বার্থে নৌকার পক্ষে এক হয়েছে। তারপরও একটি দলের বিশেষ চাওয়া ও বিভ্রান্তমূলক আলোচনার কারণে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন। তিনি দেশের জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে আমাকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। আমি আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছি, দলের নেত্রীর নির্দেশে ও বৃহত্তর স্বার্থে।'
পরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জি.এম সাহাতাব উদ্দিনের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন রাজু। সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে আসার সময় দলীয় নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এতে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এদিকে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের খবরে দলের নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়কে অবস্থান নিয়ে তাকে প্রার্থী হিসেবে বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান মওলা বলেন, ‘রংপুরের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের মূল স্রোতে থাকবে বলে আমরা অনেক আশায় ছিলাম। কিন্তু তা হলো না। এরশাদপুত্রকে মহাজোটগত ভাবে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ যে ছাড় দিল, তা বিরল। আমরা আগামীতে রংপুরবাসী নৌকা ছাড়া কাউকে ভোট দেব না।'
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে বর্তমানে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
এ ব্যাপারে রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জি.এম. সাহাতাব উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম রাজু তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বৈধ রয়েছে জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহি সাদ, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শূন্য ঘোষিত রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া গেছে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হয় ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর। তার ১৮ দিন পর ৫ অক্টোবর হবে ভোটগ্রহণ।