ঈদকে ঘিরে বেপরোয়া ছিনতাই চক্র

  • মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছিনতাই ছবি: সংগৃহীত

ছিনতাই ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: গৃহবধু সুমনা ইসলাম (ছদ্মনাম)। বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শনির আখড়া থেকে ঈদ শপিংয়ে আসেন গুলিস্তানে। ঈদের  শপিং শেষে যখন বাড়ির পথে রওনা হন তখনই ঘটে বিপত্তি।

কেনাকাটা শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে বাস ধরে ফিরছিলেন। বাস ভর্তি গিজগিজ করছে মানুষ। কিছুপথ যেতেই চোর চোর বলে বাসের লোকজনের চিৎকার।

বিজ্ঞাপন

সুমনা বুঝে উঠার আগেই ছিনতাইকারী ছোবল দিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে তার কানের দুল। টিস্যু দিয়ে কান চেপে ধরলেন। কানের অনেকখানি ছিড়ে গেছে সুমনার। ততক্ষণে ছিনতাইকারি পাগার পার।

রাজধানীতে ছিনতাই এমন ঘটনা প্রতিদিনের। কিছুদিন পর পরই শোনা যায় কারও ব্যাগ, মোবাইল আবার কারও ভ্যানেটি ব্যাগ কিংবা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।

গুলিস্তানের শরবত বিক্রেতা নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছিনতাইয়ের ঘটনা গুলিস্তান, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। ছিনতাইয়ে একটি চক্র অল্প বয়সী শিশুদের ব্যবহার করে। তাদের দেখে মনেই হবে না যে এরা ছিনতায় করতে পারে। এরা কখনো ভিক্ষুক কখনো কাগজ-ঠোঙ্গা কুড়ানির বেশ ধরে থাকে।

বৃহস্পতিবার(১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষজন। ফুটপাতে নতুন পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চলছে হরদম কেনাকাটা।

অপরদিকে, ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পথচারী ও যাত্রী সাধারণের উদ্দেশ্যে মাইকে সচেতনতামূলক ঘোষণা হচ্ছে। অপরিচিত কারো দেয়া কিছু খাবেন না, মোবাইল-মানি ব্যাগ সাবধানে রাখুন, রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং, সড়কবাতি দেখে চলুন ইত্যাদি।

এতকিছুর পরও ব্যস্ততম নগরীতে ছিনতাই চক্রের পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টি কিংবা মলম পার্টির দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ঈদে বেশি সক্রিয় এসব চক্র।

রেশমা হাবিব তেঁজগাও কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিন দিন আগে টিউশন শেষে ফিরছিলেন ওয়ারলেস রেলগেটের বাসায়। উঠে বসেছেন রিকশা। দুজন হেলমেট পরা মোটরসাইকেল আরোহী অতিক্রমের সময় ভ্যানেটি ব্যাগ ধরে টান দেয়। রিকশা থেকে পড়ে গেলেন রেশমা। পরে হাত ও হাটুতে চোট নিয়ে বাসায় ফেরেন।

এদিকে ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ ব্যাগ হারিয়ে কয়েকদিন আগে শেরে বাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা এস এম কামরুল হাসান।

তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, অফিস থেকে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। মোটরসাইকেল আরোহী পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তার ব্যাগ ধরে টান দেয়। ছিনতাই যাওয়া ব্যাগে মোবাইল, লাপটপ, অফিস আইডি, ভোটার আইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। এভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তই।

শনিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন সংবাদ সম্মেলন করে জানান, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৫৭ জন, জাল নোট তৈরিকারী ৮ জন, মাদক ব্যবসায়ী ৬ জন এবং ৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের এই চক্রের আরও সদস্য রয়েছে যাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।