বিপ্লবী বাঘা যতীনের জীবন ও রণনীতি



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়

  • Font increase
  • Font Decrease

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা বাঘা যতীন ছিলেন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-শাসন চলাকালীন একজন সরকারি চাকুরিজীবী। তন্মধ্যেও কিভাবে এবং কেমন করে তিনি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের সঙ্গে এত নিগূঢ়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন, সেটা এক আশ্চর্যের বিষয়। শুধু তাই নয়, তিনি যে ধরনের বিপ্লবের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, তা কোনো অসহিংস বিপ্লবও ছিল না। ছিল সরাসরি ও সহিংস বিপ্লব। ছিল গেরিলা হামলা, ছিল বোমাবর্ষণ, ছিল গুপ্তহত্যা ইত্যাদি। আর এটাই ছিল বাঘা যতীনের বিপ্লবের ধরন।

আমরা এই সিদ্ধান্তে খুব সহজেই উপনীত হতে পারব যে, গান্ধীজির অসহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের এসব সহিংস আন্দোলনের ঐক্য না ঘটলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে মুক্তি পাওয়া আমাদের জন্য আরো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হতো।

যতীন্দ্রনাধ মুখোপাধ্যায় তাঁর চাকুরিজীবনের মধ্যদিয়েই নানাধরনের গুপ্ত সমিতি গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন। যেসকল গুপ্ত সমিতিতে তিনি ও তার অন্যান্য সহযোগীরা নানামুখী সহিংস কর্মকাণ্ড অনুশীলন করতেন।

এসব অনুশীলনে কেউ থাকতেন শিক্ষক, কেউ বা ছাত্র। কিন্তু সকলেরই উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সেটা হলো ভারতবর্ষ থেকে আধিপত্যবাদী নিষ্ঠুরপ্রাণ ব্রিটিশদেরতে তাড়াতে হবে। এই গুপ্ত সমিতিগুলোতে যতীন্দ্রনাথ শরীরচর্চা, বন্দুক বা রিভলভার ব্যবহার ও বোমা বানাবার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষা দিতেন।

একই সঙ্গে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ছিল একটি সাহিত্যপিপাসু মন। আন্দোলনের কুলকিনারাহীন সময়গুলোতে তিনি সাহিত্যের মধ্যে অনেক কিছুই খুঁজে নিতেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং রচনাপত্র ছিল বাঘা যতীনের সবচাইতে প্রিয় বিষয়।

বাঘা যতীন উপাধি প্রাপ্তি

একটি মজার গল্প দিয়েই এই লেখাটি শুরু করা যাক। ছোটবেলা থেকেই অন্যদের তুলনায় যতীন্দ্রনাথের দেহশক্তি ছিল অপরিসীম। দেখতেও তিনি লম্বা চওড়া, স্বাস্থ্যবান। তার এই দৈহিক সামর্থ্যের কথা সকলেই জানত। তিনি এমনকি ষাট-সত্তর মাইল পথ সাইকেলে চড়ে ঘুরে আসতে পারতেন। এইসব ব্যাপার তার কাছে বিশেষ কোনো আড়ম্বরপূর্ণ ঘটনা ছিল না। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়তেও তার বিশেষ কোনো অসুবিধা হতো না। যা হোক, যতীন্দ্রনাথ যে গ্রামে থাকতেন, তার পাশের গ্রাম কলুপাড়ায় একবার একটা বাঘের উৎপাত শুরু হলো। প্রায়দিনই বাঘটি কলুপড়ায় আসত, এবং কিছু না কিছু অনিষ্ট করত। বেশিরভাগ সময় গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে যেত। বাঘের এইসব যন্ত্রণায় গ্রামের লোকেরা অতীষ্ট হয়ে উঠল।

সেদিন যতীন্দ্রনাথ সকাল-সকাল বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছিলেন, ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। এমন সময় কলুপাড়া থেকে একদল লোক তাঁর বাড়িতে এসে হাজির। বাড়িতে তখন যতীন্ত্রনাথের এক মামাত ভাই ছিলেন। লোকেরা তাকে বলল, ‘প্রায়দিনই আমাদের গ্রামে একটি বাঘ গোয়াল ঘর থেকে গরু নিয়ে চলে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের একটু যতীনদাদার সাহায্য দরকার।’ মামাত ভাই ভাবলেন, যতীনদা তো মাত্রই ঘরে ঘুমিয়েছেন, না জাগানোই ভালো হবে। অগত্যা তিনিই একটা রাইফেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন কলুপাড়ার লোকেদের সঙ্গে।

বাঘটি তখন ঘুমাচ্ছিল। মানুষের পদচারণার শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে সে মানুষ অভিমুখে দৌড়াতে আরম্ভ করল। যতীন্দ্রনাথের মামাত ভাই গুলি ছুড়লেন, কিন্তু গুলি লক্ষভ্রষ্ট হলো। এইদিকে মানুষের হট্টগোল আর গুলির শব্দে বাঘটি আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল। এরমধ্যে হৈ হট্টগোল শুনে যতীন্দ্রনাথেরও ঘুমটা ভেঙে গেল। তিনি হাতের কাছের একটা ছুরি পকেটে নিয়ে বেরিয়ে আসলেন কী সমস্যা দেখবার জন্য।

ঘটনাচক্রে যেইদিকে বাঘ ছিল, তিনি সেদিক দিয়েই এগিয়ে আসতে থাকলে হঠাৎ পাশের একটি ঝোপ থেকে বাঘ তার ওপরে লাফ দিয়ে পড়ল। যতীন্দ্রনাথ তখন নিতান্তই অপ্রস্তুত ছিলেন, তবু তার শক্তিশালী দুই বাহু দিয়ে বাঘের গলাটা ঠেস দিয়ে ধরলেন, ফলত বাঘ ঠিক তাকে হামলা করতে পারল না, আবার নিবৃতও হলো না। এভাবে ঠেস দিয়ে রাখার প্রক্রিয়াটিও মাঝেমাঝে একটু পিছলে যেতে লাগল। ওদিকে তার মামাত ভাই গুলিও করতে পারছিল না যদি না গুলি গিয়ে আবার যতীন্দ্রনাথের গায়ে লাগে। সবাই দেখছিল বাঘটি একবার যতীন্দ্রনাথের ওপরে চড়ে বসছিল, পরক্ষণেই আবার যতীন্দ্রনাথ বাঘটিকে ফেলে দিয়ে বাঘের ওপর চড়ে বসছিলেন। এইভাবে কিছুক্ষণ চলার পর হুট করেই তাঁর মনে পড়ে গেল তার পকেটে একটা ছুরি রয়েছে। মনে পড়তেই তিনি বাঘটির গলা একহাতে ধরে রেখে অন্য হাতে ছুরি বের করলেন, এবং বাঘটিকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করলেন। আর এই ঘটনার সূত্র ধরেই যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নাম হয়ে গেল ‘বাঘা যতীন’। পরবর্তীকালে ইতিহাসের পাতায়ও যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়-এর চেয়ে ‘বাঘা যতীন’ নামেই তিনি বেশি উদ্ধৃত হন।

বাঘা যতীনের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কয়াগ্রামে। শিলাইদহ থেকে এই গ্রামের দূরত্ব বেশি ছিল না। মাঝেমধ্যেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়াগ্রামে আসতেন। প্রসঙ্গত, বাঘা যতীনের স্ত্রী ছিলেন ইন্দুবালা দেবী। তাঁর বাবা উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, এবং মায়ের নাম শরৎশশী দেবী।

কয়াগ্রামে ‘নবজাগরণ’ নামের একটি সভা বসত। মূলত সেই সভাতে যোগ দেবার জন্য রবীন্দ্রনাথ কয়াগ্রামে যেতেন। বাঘা যতীনের জীবনে এই ‘নবজাগরণ’ সভা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ প্রভাব আছে।

বাঘা যতীনের রণনীতি

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর বিপ্লবী দলগুলো অনেক বেশি সহিংস হয়ে উঠেছিল। ওই সময়েই বাঘা যতীন বিপ্লবী দলগুলোর অভ্যন্তরে যেই চিন্তা বা প্রবৃত্তি ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করছিলেন, সেটা হলো—‘এক হাতে রিভলভার আর অন্য হাতে সায়ানাইডের বিষ’।

যে কোনো ঘটনা ঘটাবার পরেই ধরা খাওয়া চলবে না। ধরা খাওয়ার বিষয়টি টের পেলেই সঙ্গে সঙ্গে বিষটুকু খেয়ে ফেলতে হবে। কেননা, ধরা খাওয়া মানেই নিজেদের ভিতরকার অনেক তথ্য শত্রুর কাছে পৌঁছে যাওয়া। আর সেটার মানে হলো, বিজয়ের সম্ভাবনা আরো পিছিয়ে যাওয়া। তাই বিজয়কে নিকবর্তী করতে হলে এই ‘হত্যা ও আত্যহত্মা’ নীতি ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

সেই সময়ে বাঘা যতীনসহ অন্য আরো অনেক বিপ্লবীর মাধ্যমে যে কর্মকাণ্ডটি বিশেষভাবে চর্চিত হচ্ছিল সেটি হলো—সেইসব ব্যক্তিদেরকে খুঁজে খুঁজে আক্রমণ করা, যারা ইংরেজদের ভিত্তিপ্রস্তরকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষভাবে সোচ্চার। এসব লোকদের নিয়ে প্রায়শই বাঘা যতীন মিটিং করতেন, এবং তাদের শাস্তিবিধান করতেন। এই পর্বে বাঘা যতীনের পরিকল্পনা বা নির্দেশে ঘটিত কয়েকটি গুপ্তহত্যার কথা উল্লেখ করা যাক। 

কয়েকটি গুপ্তহত্যা

১৯০৮ সালে মি. কিংসফোর্ডকে খুন করতে চাওয়ার ঘটনায় ক্ষুদিরাম বসু পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছিলেন, একথা আমরা জেনে থাকব। কিন্তু সেই ঘটনায় ক্ষুদিরামের অপর যে সঙ্গী ছিলেন, অর্থাৎ প্রফুল্ল চাকি—তিনি ব্রিটিশদের কাছে ধরা দেননি। বরং ধরা না দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। প্রফুল্ল চাকির সেই আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল মূলত এক বাঙালি পুলিশ সদস্যের কারণে। বিশ্বাসঘাতক পুলিশ সদস্যেরর নাম নন্দলাল ব্যানার্জী। বাঘা যতীন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নন্দলাল ব্যানার্জীর মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরো পড়ুন ➥ ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি : দুই বাঙালি শহীদের গল্প

এই মর্মে বাঘা যতীন তাঁর এক শিষ্যকে দায়িত্ব দিলেন। বললেন, নন্দলালের বাড়ির ঠিকানা, এবং তার অপরাধ। বাঘা যতীনের প্ল্যান অনুযায়ী তার সেই শিষ্য সফলভাবেই গুপ্তহত্যার কাজটি সমাধা করল। ঘটনাটি ছিল এমন যে, সেদিন সন্ধ্যার পরে নন্দলালের বাইরে তেমন কোনো কাজ ছিল না। তাই তিনি কয়েকটি চিঠির উত্তর লিখে ঘরের পোশাক পরেই বেরিয়েছিলেন ডাকবাক্সে চিঠিগুলো রেখে আসতে। কিন্তু সেখানেই তার মৃত্যুর বিধান লিখিত ছিল। বিপ্লবী সেই শিষ্য নন্দলালকে গুলি করবার পর নিজেই নন্দলালের বাড়িতে সেই খবরটি দিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, বাইরে বেরিয়ে নন্দলালের খোঁজটা নিয়ে আসতে। এই ঘটনা দ্বারা তৎকালীন ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের গুপ্তহত্যাগুলোর ধরনগত বৈশিষ্ট বুঝতে পারা যাবে।

বাঘা যতীন কর্তৃক গুপ্তহত্যার আরেক শিকার ছিলেন মানিকতলা বোমাহামলার মামলায় সরকার পক্ষের উকিল আশু বিশ্বাস। এই উকিল বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করেছিলেন। এছাড়া, মানিকতলা বোমাহামলার এই ঘটনায় বহু বিপ্লবীকে আটক করেছিলেন বাঙালি পুলিশ সদস্য শামসুল আলম। তার ওপরও জারি হয়েছিল বাঘা যতীনের হত্যানির্দেশ।

শামসুল আলম কলকাতা পুলিশের ডেপুটি সুপার। ইংরেজদের শাসনপ্রক্রিয়ার যে স্বাভাবিক নিষ্ঠুরতা, শামসুল বলতে গেলে সেটাকেও অতিক্রম করে গিয়েছিল। একবার এক বন্দী বিপ্লবী পিপাসার্ত হয়ে তার কাছে পানি চাইলে শামসুল ওই বিপ্লবীর মুখে প্রস্রাব করে দিয়ে বলেছিল, ‘এই নে জল খা।’

পুলিশের এই ডেপুটি সুপারকে পাকরাও করতে বাঘা যতীনের বেশ সমস্যা পোহাতে হচ্ছিল। কাকে দায়িত্ব দেবেন এ কাজের, তিনি বুঝতে পারছিলেন না। তখন বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত নামের এক বিপ্লবী তাকে বললেন, ‘দাদা আমাকে দায়িত্বটা দিয়েই দেখুন না!’ যতীন্দ্রনাথ তাঁকেই দায়িত্বটা দিলেন।

শামসুল আলম সর্বদা পুলিশ-পরিবেষ্টিত হয়ে ঘোরাফেরা করত। তাকে একা পেতে হলে যেতে হবে হাইকোর্টে। একমাত্র সেখানেই হয়তো তিনি একা একা সময় কাটিয়ে থাকতে পারেন। বীরেন্দ্রনাথ তাই অন্য একজন বিপ্লবী বন্ধু সহকারে হাইকোর্টে চলে গেলেন। এমনকি তখনও পর্যন্ত বীরেন শামসুলকে চিনতেনও না, চিনিয়ে দিতেই ওই বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া। বন্ধু তাঁকে দূর থেকে শামসুল আলমকে চিনিয়ে দিল।

বীরেন্দ্রনাথ গিয়ে আদালতকক্ষের বারান্দায় অবস্থান নিলেন। কিছুক্ষণ পরে শামসুল একটি ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠবার জন্য উদ্যত হয়েছেন, এমন সময়ে বীরেন্দ্রনাথ তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি শামসুল আলম?’ উত্তরে সম্মতি আসলো। বীরেন্দ্রনাথ বললেন, ‘আপনার জন্য একটি চিঠি আছে।’ এই বলে তিনি পকেটে হাত ঢোকালেন, কিন্তু পকেট থেকে চিঠি আর বের করলেন না। রিভলভারটা বের করে শামসুলের বুকে ঠেকিয়ে গুলি করে দিলেন।

অবস্থানরত অন্য পুলিশেরা বীরেনের পিছু ধাওয়া করল। বীরেন অবশ্য গুলি করতে করতেই ছুটছিলেন, কিন্তু গুলি শেষ হয়ে যাওয়াতে এক পর্যায়ে তিনি ধরা পড়ে গেলেন। তবে ধরা পড়ে গেলেও, বাঘা যতীনসহ কারো নামই তার মুখ থেকে বের করা যায়নি।

এরকম আরো অনেক গুপ্তহামলার নির্দেশদাতা ছিলেন এই বাঘা যতীন। তারপর যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে এলো, তখন তিনি আরো বৃহৎ আকারে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।

কূটনৈতিক তৎপরতা

১৯১২ বা ১৩ সাল পর্যন্ত যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের এই নীতি ছিল অর্থাৎ গুপ্তহামলা বা গুপ্তহত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকে তরান্বিত করা—১৯১৩ সালের পরে এরসাথে তিনি আরো কিছু বিষয় যুক্ত করলেন। এই নতুন সংযুক্তির মধ্যে ছিল—সরাসরি লাট সাহেবদেরকে মেরে তাদের মধ্যে বিপুলভাবে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। আর বিপ্লবী দলগুলার মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা।

ঠিক এই সময়টাতেই বলকান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপেও একটা ঠান্ডা লড়াই আরম্ভ হয়েছিল। তখন জার্মান সম্রাট কাইজার উইলিয়াম ইংরেজদের বিশেষ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার কারণে ইংরেজরা বেশ বেকায়দাতেই পড়ে গেল—একদিকে ভারতবর্ষের বিপ্লবীরা ক্রমশ জেগে উঠছে, অন্যদিকে ঘর সামলানো তো তাদের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

যতীন্দ্রনাথ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। রাসবিহারি বসুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি আরো জোরদারভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। সারা ভারতবর্ষের সৈন্যদলকে এক করবার প্রক্রিয়া গ্রহণ করলেন। রেললাইন এবং ব্রিজ উপড়ে দেওয়া, অথবা টেলিগ্রাম ও টেলিফোনের তার-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ আরো অনেক প্রকল্প তারা তখন জোরেসোরে বাস্তবায়ন করতে লাগলেন।

তারপরে, যখন ইংরেজ বনাম জার্মানির পারস্পরিক বিগ্রহের মধ্য দিয়ে পুরোপুরিভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়ে গেল, তখন যতীন্দ্রনাথ ভাবলেন, নিশ্চয়ই এই সময়ে জার্মানিরা তাদেরকে সাহায্য করবে। যদি জার্মানির সাহায্য নিয়ে ইংরেজদের ওপর বড়ভাবে হামলা করা যায়, তাহলে ক্ষতি কী! এমন চিন্তায় তিনি জার্মানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে, জার্মান সরকার তাঁকে জানাল, তারা ভারতবর্ষের বিপ্লবীদেরকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে চায়।

জার্মানরা যে দুটি জাহাজে করে অস্ত্র পাঠাল, সেগুলোর নাম ছিল—ম্যাভেরিক এবং এস হেনরি। যতীন্দ্রনাথের নিকটতম দুজন সহযোদ্ধা ছিলেন একজন যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, আরেকজন ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এই দুজনকে দুই জায়গায় অস্ত্র রিসিভ করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। একজনকে সুন্দরবনে, অন্যজনকে গোয়ায়।

জাহাজ থেকে নামিয়ে নৌকায় করে ওইসব জায়গায় অস্ত্রগুলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যতীন নিজে রইলেন বালেশ্বরী সমুদ্রের ধারে যেখানে এসে জাহাজগুলো থামবে। জার্মানরা শুধু অস্ত্রসস্ত্রই নয়, বিপুল পরিমাণে অর্থকড়িও জাহাজে করে পাঠিয়েছিল।

জাহাজ থেকে অস্ত্রসস্ত্র নামিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মূল প্ল্যান এটাই ছিল যে—ওইদিকে রাসবিহারি বসু পাঞ্জাব মেইল ট্রেনটি আটকে দেবেন। পাঞ্জাব মেইল থেকে বিপ্লবীরা বিপুল পরিমাণে অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়বে, এবং এক ঘণ্টার মধ্যে ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে নেবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ইংরেজরা জাহাজ দুটির খবর পেয়ে যাওয়ায় ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে এই বিপুলসংখ্যক অস্ত্রসস্ত্র আর পৌঁছানো সম্ভব হলো না। বাঘা যতীন আর রাসবিহারি বসুর সমস্ত প্ল্যানই ভেস্তে গেল। ইংরেজরা মাঝ সমুদ্রে ‘ম্যাভরিক’ আর ‘এস হেনরি’কে আটক করে এবং সকল অস্ত্র নামিয়ে নেয়।

বুড়ি বালামের যুদ্ধ

স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর ব্রিটিশ শাসকদের চোখে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আর কোনো সাধারণ চরিত্র রইলেন না। ইংরেজরা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে আরম্ভ করল। অন্যদিকে তিনি চারজন শিষ্যকে সঙ্গে করে কাপ্তিপোদা নামক একটি অঞ্চলে চলে গেলেন। নিজের পরিচয় আড়াল করবার স্বার্থে সেখানে তিনি গেরুয়া রঙের পোশাক পরে সাধু হিসেবে আবির্ভুত হলেন। এবং স্থানীয় মানুষেরাও তাকে সাধু হিসেবেই গ্রহণ করে নিল।

গোপনে যুদ্ধের প্ল্যান করে আর বাহ্যত সাধুগিরি করে তার দিন কাটতে লাগল। কেউ রোগ নিয়ে আসলে তিনি ঝারফুক করে দিতেন, পরামর্শ দিতেন। তবে এই কৌশল বেশিদিন স্থায়ী হলো না। ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দারা জেনে ফেলল তার অবস্থান। ফলত বিরাট ঘোরসওয়ার বাহিনী, হাতি আর রাইফেলধারী ৩০০ সৈন্যকে নিয়ে তারা রওনা হয়ে গেল যতীন্দ্রনাথকে ধরবার জন্য।

যতীন্দ্রনাথের সঙ্গে যে চারজন শিষ্য ছিলেন, তাদের নাম—চিত্তপিয়, জ্যোতিষ, নীরেন এবং মনোরঞ্জন। যতীন্দ্রনাথ আর তার এই চারজন সহচর, মোটমাট মাত্র পাঁচজন মিলেই ইতিহাসের সেই বিখ্যাত ‘বুড়ি বালামের যুদ্ধ’ সংঘটিত করেছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে সেই যুদ্ধের বর্ণনা করা যাক :

দূর থেকে হাতির ঘণ্টার শব্দ পেয়ে চিত্তপিয় তার গুরুকে জানালেন বিষয়টি। যতীন্দ্রনাথেরও বুঝতে বাকি রইল না কী ঘটনা। তাঁরা এমন সময়ে বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, যখন চাইলেই তারা পাঁচজন খুব সহজেই পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তাতে তাদের মন সায় দিল না। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও তারা সম্মুখ-যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন।

তাঁরা তাদের আস্তানার পেছনে গিয়ে জঙ্গলে একটি জায়গা নির্বাচন করলেন, যেই জায়গাটিতে পৌঁছাতে হলে ব্রিটিশ সৈন্যদের বেশ বেগ পোহাতে হবে। কাদামাটির পিচ্ছিলে জায়গাটা খুব বিপদসংকুল। যতীন্দ্রনাথ তার সঙ্গীদের নিয়ে অবস্থান নিলেন ছোট কয়েকটি ঢিবির পেছনে।

ওই অঞ্চলের কেউ একজন যতীন্দ্রনাথদেরকে ঢিবির পেছনে অবস্থান নিতে দেখে সেটা ইংরেজদেরকে জানিয়ে দিল, কিছুমাত্র অর্থের আশায়। ইংরেজরা তথ্য পেয়ে ওই ঢিবিগুলোর দিকে গুলি করতে করতে আগাতে লাগল। ঢিবিতে সেগুলো প্রতিহত হলো, এবং যতীন্দ্রনাথ তার সঙ্গীদেরকে একটিও পাল্টা গুলি না করে চুপচাপ বসে থাকার নির্দেশ দিলেন।

ব্রিটিশ সৈন্যরা গুলি করতে করতে যখন প্রায় পৌঁছে গেল, তখনই যতীন্দ্রনাথ গুলির নির্দেশ দিলেন। যেহেতু তখন সৈন্যরা ছিল খুব নিকটে, তাই একটি গুলিও লক্ষভ্রষ্ট হলো না। প্রচুর সৈন্য মারা গেল। কাদায় মাটিতে পিচ্ছিলে তারা পিছু হটতেও বাধ্য হলো।

বুড়ি বালাম যুদ্ধের প্রাপ্তিকে জয়-পরাজয় দিয়ে বিচার করা যাবে না। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-আন্দোলনে এটাই প্রথম প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনা। আর এই যুদ্ধই পরবর্তীতে সুভাষচন্দ্রের হাত ধরে আজাদ হিন্দ বাহিনীর যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল।

যা হোক, যতীন্দ্রনাথ গুলি নষ্ট করতে নিষেধ করলেন। যেহেতু তাঁদের গুলি ফুরিয়ে এসেছিল। আর এই গুলি ফুরিয়ে আসাই তাঁদের জন্য কাল হলো। তাঁরা খুব নিখুঁতভাবে গুলি করতে করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একটি গুলি এসে প্রথমে যতীন্দ্রনাথের হাতের একটি আঙুল উড়িয়ে নিল। অন্যদিকে আরেকটি গুলি এসে চিত্তপিয়কে শহীদের মর্যাদা প্রদান করে গেল।

এইভাবে তিনঘণ্টা যুদ্ধ চলল। তারপরে একটা সময় যখন বিপ্লবীদের সব গুলিই ফুরিয়ে গেল, তখন তারা নিরস্ত্র হয়ে বসে পড়ল। ততক্ষণে যতীন্দ্রনাথের পিঠে ও কপালে আরো দুটি গুলি লেগেছ, নীরেন আর মনোরঞ্জনের শরীরেও গুলি বিঁধেছে। জ্যোতিষ তাদের সাময়িক পরিষেবায় নিজেকে নিযুক্ত করল। ব্রিটিশ সৈন্যরা যখন নিশ্চিত হলো যে, প্রতিপক্ষের হাতে আর কোনো অস্ত্র নেই, তখন তারা বিপ্লবীদেরকে ঘিরে ফেলল।

আটকের পরে যতীন্দ্রনাথকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা শুধু এটাই চেয়েছিল, তাকে কোনোমতে যেন ফাঁসি দেওয়া যায়। কিন্তু ব্রিটিশদের সেই সুযোগ হয় না। পরদিন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়—ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহান বিপ্লবী বাঘা যতীন হাসপাতালের বিছানায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

যতীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর বহুদিন পর্ন্ত তার গ্রামের এক পাগল ব্যক্তি এই গানটি চিৎকার করে করে গাইতেন—

“যতি মুখুজ্জে কোথায় গেল, যতি মুখুজ্জে কোথায় গেল
কোথায় গেল, কোথায় গেল আর এলো না, কোথায় গেল?”

যতীন্দ্রনাথের দুই সহযোগী মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন দাসগুপ্তের ফাঁসি হয়েছিল। আর জ্যোতিষ পালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে দূরের দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানা যায়, অত্যাচারে সেখানে জ্যোতিষ পাল পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;