রাগ থাকুক নিয়ন্ত্রণে
মন ভালো-খারাপ থাকা, বিষণ্ণ হওয়া, আনন্দিত হওয়া কিংবা বিরক্তিবোধের মতোই অন্যতম একটি অনুভূতি হলো রাগ।
অন্য সকল অনুভূতির মতোই, রাগ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ মানসিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কে না জানে, অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো নয়। তেমনভাবে রাগের অনুভূতিও যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে একইসাথে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর।
শুধু স্বাস্থ্য নয়, নেতিবাচক প্রভাবের বিস্তার ঘটে নিজের জীবনের সকল ধরণের সম্পর্কের উপরেও। রাগের বশবর্তী হয়ে অনেকেই হয়ে যায় হিতাহিতজ্ঞান শূন্য। কী বলা অনুচিত ও কোন কথাটি অমূলক- তা একেবারেই ভুলে যান। নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে সুস্থ রাখতে রাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে সর্বাত্মকভাবে। কীভাবে রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনবেন? জানতে পড়ে নিন আজকের ফিচারটি।
কিছু বলার আগে ভাবুন
স্বাভাবিকভাবে রাগের মুহূর্তে মানুষ পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারে না। রাগের অনুভূতির প্রাবল্য সঠিকভাবে চিন্তা করার শক্তিকে দমিয়ে রাখে। তাই রাগের মুহূর্তে যথাসম্ভব কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষত রাগ যদি কোন ব্যক্তির উপরে হয় তবে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিতান্তই যদি জরুরি কথা অথবা কথোপকথনের প্রয়োজন দেখা দেয় তবে ভেবেচিন্তে কথা বলার চেষ্টা করুন।
রাগ কমে যাওয়ার পর কথা বলুন
যেহেতু রাগের মাথায় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে, রাগ কমে যাওয়ার পরেই নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন। কারণ রাগের প্রচন্ডতা কমে যাওয়ার পর সঠিক, যুক্তিযুক্ত ও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা সম্ভব হয়। রাগ কমার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর সময় নিয়ে নিজের ক্ষোভের কারণ জানান। এতে একইসাথে নিজে হালকা হতে পারবেন এবং সুন্দরভাবে বোঝাতেও পারবেন নিজের রাগ ও ক্ষোভের কারণ।
ডায়েরিতে লিখুন রাগের কথা
লেখালেখি সবসময়ই উপকারি। নিজের অনুভূতিকে সম্পূর্ণরূপে ও দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশের জন্য ডায়েরি লেখা সবচেয়ে কার্যকর। এতে নিজের মনের মতো করে রাগকে ব্যক্ত করা সম্ভব হয়, মাথা ঠাণ্ডা হয় ও পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্বে রাখা সম্ভব হয়। কোন পরিস্থিতি কিংবা ব্যক্তি বিশেষের উপর রাগ হলে ডায়েরিটা টেনে নিন। মুখের কথার চাইতে ডায়েরিতে লিখে রাখা কথা অনেক বেশি নিরাপদ।
শরীরচর্চা করুন
এই শরীরচর্চা বলতে রীতিমত নিয়ম মেনে ব্যায়াম বোঝানো হচ্ছে না। রাগের মুহূর্তে নিজেকে শারীরিকভাবে একটিভ রাখলে রাগ দ্রুত কমে যায়। যখনই প্রচন্ড রাগ উঠবে, কোন একটি স্থানে বসে না থেকে দ্রুত হাঁটুন, ছোট ছোট লাফ দিন। ঘরের মধ্যে পায়চারি করুন। এনডরফিনস (Endorphins) হরমোনের নিঃসরণ মনকে ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে।
বাইরে বেড়িয়ে পড়ুন
অনেকদিনের জমানো রাগ কোনভাবেই কমছে না? মাথা থেকে কোনভাবেই ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না রাগ? একা একাই বেড়িয়ে পড়ুন। নিজের পছন্দের কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসুন। পছন্দের কোন খাবার খান। কফি শপে নিজের পছন্দের কফিটি অর্ডার দিন। নিজের সাথে নিজের একান্ত কিছু সময় কাটান। দেখবেন মন অনেকটা শান্ত হবে, রাগ কমবে।
সম্ভাব্য সমাধান খুঁজুন
অগোছালো ঘর, কাজের চাপ, শিশুদের যন্ত্রনার জন্যেও হুট করে রাগ উঠে যায়। রাগের ধরণ যদি এমনটা হয় তবে অহেতুক রাগারাগি না করে চুপচাপ থেকে কিছুটা সময় নিয়ে সমাধান নিয়ে ভাবুন। একটা সমস্যাকে কীভাবে সমাধান করা যায়- সেটা নিয়ে ভাবলে একইসাথে রাগ কমে আসবে ও সমাধানও পাওয়া যাবে।
রাগ ব্যক্ত করুন ‘নিজেকে’ উপস্থাপন করে
প্রথমেই বলা হয়েছে রাগের মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য। যদি নিতান্তই নিজের অনুভুতিকে প্রকাশ করতেই চান, তবে নিজের অবস্থানকে তুলে ধরে রাগ ব্যক্ত করুন। যেমন: ‘তোমার এই কথাটা বলা একদম ঠিক হয়নি’ এই কথার পরিবর্তে বলুন, ‘তোমার এই কথাটাতে আমি কষ্ট পেয়েছি’। এতে নিজের অনুভূতিকেও ব্যক্ত করা সম্ভব হবে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
বুঝতে চেষ্টা করুন কখন সাহায্য প্রয়োজন
রাগের বশবর্তী হয়ে অনেকেই নিজেকে বা অন্যকে আহত করে বসেন, জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করেন। যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বরং এমন অতিরিক্ত রাগের অনুভূতির লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করতে হবে।