উজ্জ্বল থাকুন পুরো রোজার মাস জুড়ে

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট/ লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র এই মাস জুড়ে নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাই নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে কার্পণ্য করা যাবে না মোটেও। তবেই ত্বক থাকবে সতেজ ও সুস্থ।

রাত পেরোলেই রোজা। এবারের পুরো রমজান মাসটি কাটবে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রচণ্ড গরমের ভেতর। এমন শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াকে সঙ্গী করে নিয়মিত রোজা রাখার প্রভাব দেখা দেবে ত্বকের মাঝে। যার ফলে পুরো রোজার মাস জুড়ে নিজেকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুষ্টিহীনতা ত্বকে নিস্প্রাণ ও নিস্তেজ ভাব তৈরি করে। যার প্রভাব রুপচর্চা দ্বারা দূর করা সম্ভব নয়। তাই রোজার মাসে সেহরী ও ইফতারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে, শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি ত্বক থাকবে সতেজ।

বিজ্ঞাপন

শুধু ত্বক নয় মাথার চুল এবং হাত ও পায়ের নখেও পুষ্টিহীনতার কারনে দেখা দেয় নিস্তেজভাব। তবে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে এই সমস্যা একেবারেই দেখা দেবে না। নিজের ত্বক, চুল ও নখ সতেজ থাকার পাশাপাশি সুস্থ থাকবে শরীরও। জেনে নিন পুরো রোজার মাস জুড়ে কোন পুষ্টি উপাদানগুলো অবশ্যই গ্রহন করা করবেন।

ভিটামিন-এ

বিজ্ঞাপন

ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য অন্যান্য সকল ধরনের ভিটামিনের মাঝে ভিটামিন-এ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। ত্বকের শুস্কভাব দূর করে কোমলভাব তৈরিতে সাহায্য করে ভিটামিন-এ। তাজা শাক, গাজর, গরুর কলিজা, পেয়ারা, পেঁপে, কমলালেবু, তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ রয়েছে। তাই প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারে ভিটামিন-এ যুক্ত ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ভিটামিন-বি সমূহ

শরীরে ভিটামিন-বি সমূহের ঘাটতি দেখা দিলে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। ফলে অল্প বয়সের মাঝেই ত্বকে দেখা দেয় বলীরেখা। বিভিন্ন ধরনের শস্যযুক্ত খাবার, মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং তেলযুক্ত মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-বি সমূহ থাকে। ইফতারে হোল গ্রেইন রুটির (শস্যযুক্ত) সাথে যেকোন প্রকারের মাছ অথবা মাংস খেতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে সেহরিতে মাংস খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। না হলে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা দেখা দিবে।

ভিটামিন-ই

ভিটামিন-এ’র পাশাপাশি ত্বক সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন-ই সমান গুরুত্ব বহন করে। ভিটামিন-ই মূলত ত্বকের বলীরেখাসহ অন্যান্য সমস্যা কমিয়ে এনে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও ভেজিটেবল অয়েলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ই রয়েছে। ইফতারিতে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে ভেজিটেবল ওয়েল।

ভিটামিন-সি

এতোগুলো ভিটামিনের কথা উল্লেখ করা হলেও ভিটামিন-সি’র কথা কেন উল্লেখ করা হয়নি, এমনটা ভেবে অনেকেই অবাক হতে পারেন! অবশ্যই অন্যান্য সকল ভিটামিনের মতোই ভিটামিন-সি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে আলাদা ভূমিকা পালন করে থাকে। যেকোন ধরণের সাইট্রাস ঘরানার (টক) ফলে ও কাঁচামরিচে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। এর মাঝে রয়েছে লেবু, কমলালেবু, জাম্বুরা, স্ট্রবেরি প্রভৃতি। যেহেতু এই ফলগুলো সাইট্রিক হয়ে থাকে, তাই ইফতারে এই ফলগুলো খেতে হবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ

উপরে উল্লেখিত ভিটামিন-এ, সি এবং ই হলো অন্যতম উপকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ। এর পাশাপাশি সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে, ত্বকে নতুন কোষ তৈরিতে এবং ত্বকের সমস্যা দূর করতে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের মাংসের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা তৈরিতে এই পুষ্টি উপাদানটি দারুন উপকারি ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে, এই পুষ্টি উপাদানটি শরীর নিজ থেকে একেবারেই তৈরি করতে পারে না। বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে এই পুষ্টি উপাদানটি শরীর পায় এবং তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। মূলত তেলযুক্ত মাছে এই ফ্যাটি অ্যাসিডটি থাকে। তাই সপ্তাহে অন্তত তিনদিন তেলযুক্ত মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

প্রচুর ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি

বিভিন্ন ধরণের খাদ্য ও পুষ্টি উপাদানের নামের ভিড়ে পানি পানের কথা ভুলে গেলে কিন্তু একেবারেই চলবে না। পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের পাশাপাশি অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। পানি শূন্যতা শুধু স্বাস্থ্য নয়, ত্বকের উপরেও ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে। বিশেষ করে রোজার মাসে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে ইফতারির পর থেকে সেহরির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পানি পান করলে, কোন সমস্যা দেখা দিবে না। অনেকেই ইফতারির সময় একসাথে ৪-৫ গ্লাস পানি একসাথে পান করেন। যা একেবারেই উচিত নয়। ইফতারির সময় থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত মোট আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।