রোহিঙ্গারা পাচ্ছে ন্যানো প্রযুক্তির সোলার পাওয়ার

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:49:53

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গার জন্য সোলার পাওয়ার বা সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ‘কক্সবাজারে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বিদ্যুৎ সুবিধা’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এ প্রকল্পের আওতায় সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে এডিবি। যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ান ডলার খরচ হবে সোলার পাওয়ার স্থাপনে।

প্রকল্পের আওতায় ন্যানো প্রযুক্তির সোলার পাওয়ার স্থাপন ছাড়াও- ৫০ কিলোমিটার ১১ কেভি ও কম ভোল্টেজের নতুন লাইন, একটি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, দুই হাজার গ্রিড পাওয়ারড স্ট্রিট লাইট ও বজ্র নিরোধক পোল, চার হাজার সোলার পাওয়ারড ২০ ওয়াট এলএডি স্ট্রিট লাইট, ৭০ হাজার রিটেইন্ড হিট কুকার বিতরণ, একটি বিদ্যমান পাওয়ার ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন এবং ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন করা হবে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের আওতায় জনবল নিয়োগ ও ডিপিপি অনুমোদন সংক্রান্ত্র এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৮টি পদও সৃষ্টি করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের ৫০টি ন্যানো-সোলার গ্রিড স্থাপন করা হবে। প্রতিটি গ্রিড থেকে ১৫০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বিআরইবি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, ন্যানো প্রযুক্তিতে ন্যানো পার্টিক্যাল দিয়ে সৌর কোষ তৈরি করা হবে। আর ওই কোষ দিয়েই ন্যানো সোলার পাওয়ার বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। আগে সোলার পাওয়ার প্রযুক্তিতে উচ্চ তাপমাত্রার ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ন্যানো প্রযুক্তিতে প্রিন্টারের মতো কম তাপমাত্রার ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও নতুন এ প্রযুক্তিতে আগের অনগ্রসর স্ফটিক্যাল প্যানেলের পরিবর্তে নমনীয় রোলস ও কোয়ান্টাম ডট ব্যবহার করা হবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কম হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের জাতিগত ও পরিচয় সংকট দেখা দেয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সেটা চরম আকার ধারণ করে। ফলে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যপক নিপীড়ন শুরু করে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের বসতবাড়ি। এক পর্যায়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। ২০১৮ সালের ৩০ মে পর্ষন্ত মোট ৬ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যার বেশির ভাগ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। মূলত কক্সবাজারের ওইসব ক্যাম্প বিদ্যুতের আওতায় আনতে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। কারণ তীব্র গরমের মধ্যেও এই সোলার পাওয়ার বা সৌরবিদ্যুৎ রোহিঙ্গাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য চার্জ দিতে পারাটা সেখানে চ্যালেঞ্জের ছিল। অবশ্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় অনেক রোহিঙ্গা সোলার প্যানেল সঙ্গে আনেন। আবার অনেকে বাংলাদেশে এসে কিনে নিয়েছেন। তবে সবার সোলার প্যানেল না থাকায় ক্যাম্পগুলোতে পর্ষাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর