আশুগঞ্জে কন্টেইনার নদীবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু অক্টোবরে!

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:42:04

‘আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষার পর এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী অক্টোবর মাস থেকে এ বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে।

গত সপ্তাহে প্রকল্পের আওতায় লোকবল নিয়োগ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। সভায় আউটসোসিং পদ্ধতিতে লোক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, সাত বছর আগে প্রকল্পটি বাতিল করে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে নৌ-মন্ত্রণালয়। পুরাতন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৬ কোটি টাকা। বিপরীতে নতুন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৮৬২ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৪৩১ কোটি টাকা ভারতের দ্বিতীয় এলওসি থেকে পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা প্রতিবেদন ও টার্মিনালের নকশা চূড়ান্ত করা হয়। যা পাঁচ মাস আগে একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের হলেও বাস্তবায়নের কাজ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলেও সমীক্ষা না হওয়া এবং ভারতের অর্থায়ন না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। নতুন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করতে প্রতি হেক্টরে দাম ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের জন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে রূপান্তর করা হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দর হতে পণ্যবাহী কন্টেইনার অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া যাবে। পাশাপাশি ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পণ্য পরিবহনে ভারতও এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা থেকে নৌপথে আসা পণ্যবাহী কন্টেইনার আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে আখাউড়া হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নেওয়া যাবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে নৌপথে পরিবহন করা কন্টেইনার ওঠানামা করতেও এই বন্দর ব্যবহার করা যাবে। ইতোমধ্যেই গত সপ্তাহে মন্ত্রীসভা বৈঠকে ভারতকে চট্রগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চর চার তলা ইউনিয়নের মহরমপাড়া গ্রামের নদীতীরে এই বন্দর স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বন্দর নির্মাণে মোট ১৩ হেক্টর বা ৩২ একর জমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে অধিগ্রহণ করা হবে আট হেক্টর বা পৌনে ২০ একর জমি আর ইজারা নেয়া হবে বাকি ১২ একর জমি।

প্রকল্পের আওতায় কন্টেইনার জেটি, মাল্টিপারপাস জেটি ও ইয়ার্ড, ব্রিজসহ এক্সেস রোড, তীর সংরক্ষণ, ট্রানজিট শেড, কার্গো শেড, অফিস ভবন ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ২৫০ টিপিএইচ ক্ষমতার মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, কনটেইনারের জন্য একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, রেল ওয়াগন বা ট্রাক লোডার ক্রয়ে চার কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ টন লেভেল লাফিং ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, জমি অধিগ্রহণে ৭৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, রেললাইন সংযোগে ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমির মালিকদের অভিযোগ- ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে। ফলে তারা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলেও আদৌ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কি-না সে বিষয়ে সন্দিহান তারা। ফলে প্রকল্প এলাকায় থাকা ১৫-২০টি চাতালসহ ৫০-৬০টি নির্মাণাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া পাচ্ছেন না জমির মালিকরা। তাই বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে নতুন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, যা একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর