সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:24:57

সরকারি ব্যবস্থাপনায় সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। যার মধ্যে ৫ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা ও বাকিটা সরকার পরিশোধ করবে। বর্তমানে কর্মরত ২১ লাখের মধ্যে প্রাথমিকভাবে সাত লাখ চাকরিজীবী এ ঋণ সুবিধা গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ। সে হিসেবে সরকারকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘কর্মরত অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীরা যাতে নিজেদের একটি বাড়ি তৈরি করে নিতে পারেন সেজন্য তাদের এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাইকে এ ঋণের আওতায় আনতে ২ বছর সময় লাগবে। আটোমেশন হওয়া সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগামী ১ অক্টোবর থেকে ঋণের আবেদন করতে পারবেন।’

জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় সরকারি চাকরিজীবীরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় গৃহ নির্মাণ করতে পারবেন। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর থেকে মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। কোনো কারণে মাসিক কিস্তি দিতে না পারলে আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তির সঙ্গে দিতে হবে। যে ব্যাংক ঋণ দেবে ওই ব্যাংকেই ঋণ গ্রহীতার বেতনের হিসাব খুলতে হবে। সর্বোচ্চ ২০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এ বিষয়ে রুপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা গৃহ ঋণ দেয়া হবে। সরকারি নির্দেশনার আলোকে ৯ শতাংশ সুদেতারা এই ঋণ পাবেন।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আগে সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ ঋণ নিতে পারতেন না। এখানে সেই বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়া হলো। অবসরে যাওয়ার পর একজন সরকারি কর্মকর্তা যে টাকা পেনশন পান তা দিয়ে একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করা যায় না। ফলে এটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে গোটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের এমডি দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ যে ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করছে সেগুলো বিক্রি করতে ট্রাই-পার্টি এগ্রিমেন্ট করা হয়। কিন্তু সরকার যেহেতু বেসরকারি রেডি ফ্ল্যাটে ঋণ দেবে সেহেতু একদিনেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হবে। ফলে সেখানে ট্রাই-পার্টি এগ্রিমেন্টের প্রয়োজন হবে না।’

এদিকে মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সাথে সমঝোতা স্মারক সই করে অর্থ

ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী জানান, মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এর মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। এজন্য সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষাসহ অন্যান্য চাহিদা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা প্রজ্ঞাপনআকারে জারি করে অর্থ বিভাগ। নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচবছর পর থেকে এবং সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহ ঋণের জন্য আবেদন করাযাবে। বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকাপর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর