গ্রামবাংলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৌমাছি ও মৌচাক

, ফিচার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, নীলফামারী | 2023-10-20 10:33:23

স্রষ্টার ভ্রাম্যমান মেশিন সর্বপ্রকার ফুল-ফল থেকে বলকারক রস ও পবিত্র নির্যাস বের করে সুরক্ষিত গৃহে সঞ্চিত রাখার দক্ষ কারিগর মৌমাছি। সঞ্চিত গৃহের মধু ছাড়াও মোম, আটা তৈরি ও বিভিন্ন শস্যের পরাগায়ণে মৌমাছির ভূমিকা অসামান্য। মধু ভেষজ ওষুধি গুনে ভরপুর ও বলবর্ধক খাদ্য। যা মৃত্যু ছাড়া সর্বোরোগের মহৌষধ। রসনা তৃপ্তিতেও মধুর জুড়ি নেই। রমনীদের রুপচর্চায়ও রয়েছে যথেষ্ট কদর।

বাঙালি সমাজে নবজাতকের মুখে একফোঁটা মধু দেওয়ার রেওয়াজ অতি প্রাচীন। তাই মানব জীবনে বহুবিধ ও অর্থনৈতিকভাবে উপকারি পতঙ্গের মধ্যে মৌমাছি অন্যতম।কিন্তু কালের বির্বতনে আজ গ্রামবাংলার প্রকৃতি থেকে মৌমাছি ও খাঁটি মধু বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় ফুলে-ফলে শস্য শ্যামলীমায় ঘেরা অন্যাঞ্চলের নেয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মৌমাছির স্বর্গরাজ্য ছিল।

আর গ্রামীণ মোঠো পথ কিংবা শহরের পথ ধরে হাঁটলে বড় বড় বৃক্ষরাজির মগডালে, দালানকোটার কার্নিশসহ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বাসাবাঁধা মৌচাক চোখে পড়ত। এদের ফল-ফসলে ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়া আর দল বেঁধে ভোঁভোঁ শব্দে উড়ে চলার সাথে গুনগুনগুঞ্জনে মাতিয়ে তুলতো এ চারপাশ। নানা তন্ত্রেমন্ত্রে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ সংসার চালাত। মৌচাক কাটা বা মধু সংগ্রহের সময় গ্রামের নারী-পুরুষ হুমড়ি পড়ত খাঁটি গাছকাটা মধু কেনার জন্য। অনেকে ফিন্নি, পায়েস খাওয়ার জন্য কেউবা ওষুধ কাজের জন্য মধু কিনে সংরক্ষণ করত। এসব কিছু যেন আজ সুদূুর অতীত। বর্তমানে বড় বড় বৃক্ষরাজি না থাকায় আবাসস্থলের অভাব, ফল ফসলে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন,অদক্ষ মধু সংগ্রহকারীরা মৌচাকে অগ্নি সংযোগ করে মৌমাছি পুড়িয়ে হত্যাসহ নানাবিধ কারণে প্রকৃতির এ অকৃত্রিম বন্ধু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এখন পুরো উপজেলা ঘুরে ২/১টি মৌচাক চোখে মেলাভার। এতে মৌমাছি ও মধু উৎপাদন আশংঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে খাঁটি মধুর আকাল চলছে। ফল-ফসলেও পরাগায়ণে মারাত্নকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। ভেজাল মধু উৎপাদনের ফলে মধুর প্রতি মানুষের বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।

চাহিদা থাকা সত্বেও বাজারের ভেজাল মধু সম্পর্কে ভোক্তার চরম অনীহা। কালেভদ্রে মৌচাকের দেখা মেলে কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির উত্তর পুষনা হাজিপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের উঠোন বাড়ির আম গাছে। এসময় তিনি জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত তার গাছে মৌমাছির দল নিরাপদে আবাস গড়ে তুলেছে।প্রতিবার মৌচাক থেকে ১ কেজির উপরে মধু আহরণ করেন। যা হাজার-বারো'শ টাকা বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় তার। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পুরণ করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে মধুর গুরুত্ব অপরিসিম। শস্যের পরাগায়ণে মৌমাছির ভূমিকা যথেষ্ট। যা প্রাকৃতিকভাবে মধু উৎপাদন ও শস্যের পরাগায়ণে মৌমাছি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার। বর্তমানে বাড়ির আঙিনায় বাক্সে অতি সহজে মৌ চাষ করা যায়। এতে ঝামেলাও খুব কম। একটি মৌচাক পালনে খরচ হয় পনের শ থেকে দুই হাজার টাকা। প্রতিদিন এর দেখাশুনা করতে হয় না। একটি মৌচাক থেকে বছরে ১৫ থেকে ১৮ কেজি মধু অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। এতে খাঁটি মধু পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে যেমন বেকারত্ব দুর হবে, তেমনি অর্থ পুষ্টি দুটোয় মিলবে।পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মাধ্যমে ফলফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষককে মৌ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর