রাস্তায় ওঠা বন্যার পানিতেই জলকেলিতে মগ্ন শিশুরা

, ফিচার

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2024-06-01 19:19:28

একদিকে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বাসা-বাড়ি। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে একাকার। কারো ঘরে ভেতরে হাঁটু পানি আর কারো বাসার সামনে পানি। ডুবছে খেলার মাঠ। ঘর থেকে বের হলেই থৈ-থৈ পানি। যাতায়াতে অসুবিধার শেষ নেই। সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কর্তা-গিন্নি।
তবে এতসবের মধ্যেও হৈ-হুল্লার নেশায় মগ্ন একদল কিশোর। বাস্তবতার কঠিন মারপ্যাচ বোঝার সময় কি আর তাদের আছে! দুরন্তপনার বয়সে তাই অপার সরলতার কারণে সংকটেও আনন্দে উল্লাসিত তারা। আগে তাও পুকুর অবধি গিয়ে তারপর দলবেঁধে হতো ঝাপাঝাপি। এখন তো ঘরের দোরগোড়ায় পানি। আর ঠেকায় কে? তাই পাড়ার বন্ধুদের সাথে রাস্তায় জলখেলিতে ব্যস্ত তারা।

বাবা মায়ের মাথায় যখন হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন ছোট শিশুরা বন্যার পানিতে যে যার মতো করে খেলে আনন্দে মাতোয়ারা। তাদের মুখে নেই কোনো চিন্তা ছাপ। নেই কোনো তাড়াও। পানির কারণে স্কুল যেতেও তো মানা। তাই নিজেদের বেশ স্বাধীন স্বাধীন লাগছে। বন্যার পানিতে লাফ ঝাঁপ, রিকশা-অটোরিকশা কিংবা ভ্যান গাড়ি রাস্তা দিয়ে গেলেই লাফিয়ে ধরে যাচ্ছে বহুদূর। পুকুর বা নদীতে সাঁতার কাটতে না পারলেও অভিজাত এলাকার রাস্তাটাই যেন এখন তাদের সব।

উপশহর সি-ব্লকে শিশুরা খেলছে / ছবি: বার্তা২৪

এমন দূরন্ত শিশুদের দেখা যায়, সিলেট নগরীর উপশহর সি-ব্লক এলাকায়। আশেপাশের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা যুক্ত নোংরা পানিতে ২০-২৫ জন শিশু করছে খেলাধুলা। কেউবা নাচছে পানিতে, আর কেউ জলকেলিতে মগ্ন। এমন দৃশ্যটি দেখতে খুবই নয়নাভিরাম। দেখলে যেকোনো কারোরই ছেলেবেলার স্মৃতি ভেসে উঠতে পারে। স্মৃতি ভেসে উঠার কথাও বটে!

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই উপশহরের বিভিন্ন কলোনিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে। কেউ স্কুলে পড়ালেখা করে। আর কেউ কেউ অভাবের সংসারে সাহায্য করতে কাজ খুঁজছে এবং দোকানাপাটে সহকারীর কাজ করছে।

শাহীন নামে ১১ বছরের একজনের সঙ্গে কথা হয়। সে বাবা-মায়ের সঙ্গে সি-ব্লক এলাকায় থাকে। তাদের ঘরে পানি উঠেছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে সকাল থেকে এখানে খেলাধুলা করছে।

সাড়ে ৯ বছরের রাজীব। উপশহর জে-ব্লক কলোনিতে তাদের বাসা। বাসায় পানি উঠলেও, ভয়ে সেখানে না সাঁতরে সি ব্লকে আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সাঁতার কাটছে। এই পানিতে গোসল করে তার বেশ ভালো লাগছে বলে জানায়।

জানা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ৭টি উপজেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলাগুলোর পাশাপাশি এবার সুরমা নদীর পানি সিলেট সিটি করপোরেশনের নিম্নাঞ্চল এলাকায় ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বাসা-বাড়িতে ও রাস্তায় চলে উঠায় উপশহর, সুবহানিঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার, মাছিমপুর, তালতলাসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
শনিবার (১ জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিকাল ৩ টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার এবং জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ১৮৯ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিলেট নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ইতিমধ্যে ৪ হাজার পরিবার। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর