সালটা ২০১০। স্থানীয় সূত্রমতে, রাজধানীর পুরান ঢাকা অঞ্চলে নিমতলীর এক বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। বিয়ের আনন্দে জড়ো হয় কনের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশী। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তারা জানতো না এই আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজনেই আজীবনের জন্য দুঃখ বয়ে আনবে।
পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন আগুনের লেলিহান গ্রাস করে মানুষদের। রাসায়নিক পদার্থের গুদামে বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে আহত হন দুই শতাধিক। প্রাণ যায় ১২৪ জনের। সেই দুর্ঘটনায় স্বজনহারা মানুষের হাহাকার-কান্নার হৈহৈ চিৎকার গগনচেরা বিষাদ ছেড়ে যায় অত্র এলাকায়।
বিয়ে বাড়ির রান্নার চুলার থেকেই সূত্রপাত হয় ভয়ংকর আগুনের। দুপুর থেকেই বিয়ে বাড়ির রান্না-বান্না চলছিল নিচতলায়। সেখান থেকে আগুন লেগে খুব দ্রুতই ছড়িয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কোনোরকম সম্ভাবনাই ছিল না। কারণ ৪৩ নম্বর নবাব কাটরায় ৫ তলা সেই ভবনের পাশেই ছিল রাসায়নিক পদার্থের গুদাম। সেই এলাকায় ছিল আরও অনেকগুলো রাসায়নিক গুদাম। দাহ্য পদার্থ হওয়ায় খুব কম সময়েই আগুন ছড়িয়ে যায় চারদিকে।
বিস্কুট কারখানা, পলিথিন কারখানা, কাগজ ও বাইন্ডিং গুদামসহ আরও কিছু কারখানার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। অল্পক্ষণের মধ্যেই আগুন ১০-১২ টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। সরু গলির বিল্ডিং হওয়ায় দুইদিকে সমান ভাবে আগুন ছড়াতে থাকে।
বিয়ে বাড়িতে কনেপক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। একই পরিবারের একাধিক সদস্য আগুনের নির্মমতায় জলে পুড়ে ছাই হয়ে যান। এলাকার দোকানপাট পুড়ে ব্যবসায়িক ক্ষতিও হয় অনেক। শতাধিক সেই প্রাণহানি নিহতদের পরিবারের লোকজন শোকে পাথর হয়ে যান। ৫ জুন, ২০১০ তারিখে নিহতদের শোকে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছিল। সেই নিমতলী দুর্ঘটনার ১৪ বছর পূর্ণ হলো। এ ১৪ বছরেই আদৌ কিছু পরিবর্তন হয়েছে?
সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর অত্র এলাকার সব দাহ্য পদার্থজনিত গুদাম সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনো সেই নিমতলী এলাকায় গুদামগুলো স্থানান্তর করা হয়নি।