সচেতনতার না থাকার কারণে দেশে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসক কম থাকায় বিদেশে চিকিৎসা প্রবণতা বাড়ছে রোগীদের। অন্যদিকে চিকিৎসকরা আন্তরিক ভাবে রোগীদের সময় দিলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রায় দুই শতাধিক নবীন চিকিৎসক অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ল্যাব এইড হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এ এফ এম কামালউদ্দিন বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী ক্যান্সারের চিকিৎসা সব দেশেই এক। বাংলাদেশে যে নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা হয় অন্যদেশের চিকিৎসকরাও একই নিয়ম অনুসরণ করেন। তারপরও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বেশি। দেশে ফিরে রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে শুধু একটা কথাই বলেন যে, যে চিকিৎসক দেখেছেন তিনি মনযোগ দিয়ে সময় নিয়ে দেখেছেন। অর্থাৎ চিকিৎসা একই হওয়ার সত্ত্বেও আন্তরিকতার কারণে রোগীদের আস্থা বেশি। আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও যদি রোগীদের আন্তরিক ভাবে সময় দিয়ে কথা বলেন, চিকিৎসা করেন, তবে বিদেশ যাবার প্রবনতা কমে আসবে।
নবীণ চিকিৎসকদের রোগীদের প্রতি সহনুভুতিশীল হওয়ার পরামর্শ দেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এম হাই। তিনি বলেন, রোগীদের সঙ্গে যতটা সম্ভব আন্তরিক ভাবে কথা বলতে হবে। শুধু টাকার পেছনে ছুটলে চলবে না।
তবে দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনা কম বলেও জানান অধ্যাপক ডা. এম এম হাই। তিনি বলেন, সচেতনতার কারণে দিন দিন ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে। সে তুলনায় ক্যান্সারের চিকিৎসক কম। ফলে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হয় চিকিৎসকদের। সরকারের পাশিপাশি বেসরকারি উদ্যোগও প্রয়োজন ক্যান্সার প্রতিরোধে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে মত দেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তিনি বলেন, রোগী হলে চিকিৎসা হবে, কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে ক্যান্সার হবে না। অনেক সময় অনেকেই আসেন শেষ সময়ে, যখন আর কিছুই করার থাকে না। তাই ক্যান্সারের লক্ষণ, উপসর্গ এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ক্যান্সার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কথা বলেন ক্যান্সার এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ মাসুমুল হক। তিনি বলেন, বিগত তিন বছর ধরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা জনসচতনতা বৃদ্ধি আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেডিকেলের কলেজ হাসপাতালের শিশু ক্যান্সার ও রক্তরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জহুরা জামিলা খান, ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগীয় প্রধান ডা. তপেশ কুমার পাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের গাইনী অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন, এপ্যোলো হসপিটালের রেজিষ্টার ডা. নারিতা খুরশিদ প্রমুখ।