বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা, কিডনি রোগের ব্যাপক প্রকোপ ও মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসার খরচ এবং কিডনি বিকল রোগীদের অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় করুণ মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘বিশ্ব কিডনি দিবস ২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে কিডনি বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) এ গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, ধনী-গরিব কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি নির্বিশেষে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সর্বস্তরের কিডনি রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার এবং বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন; স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট; সাইফুল আলম, সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব; মোহাম্মদ ইসমাইল, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও সাবেক সচিব; মিশা সওদাগর, সভাপতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি; গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল; সৈয়দ মোস্তফা কামাল, আঞ্চলিক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার।
ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাপাতালের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন। তিনি কিডনি রোগের প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং কিডনি রোগ চিকিৎসায় ‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য: প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ এ বিষয়ের ওপরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব সাইফুল আলম বলেন, কিডনি রোগ বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে হবে এবং এর চিকিৎসা ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে না কেন সেটা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে বাচ্চাদের, যুবকদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব জনাব মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যয় এত বেশি যে, বিত্তবানদের জন্যও তা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর। যেহেতু এই রোগ প্রতিরোধ যোগ্য তাই প্রতিরোধের উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য সরকারকেই মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, কিডনি রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, কিডনি রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। এ জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
ডা. এম এ সামাদ তার মূল প্রবন্ধে বলেন, সারা বিশ্বে ৮৫ কোটিরও অধিক লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগ মহামারি আকারে ব্যাপ্তি লাভ করছে। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যায়বহুল। তাই সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিরোধের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পস-এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে যদি সকলে এগিয়ে আসেন তা হলে এই রোগ নিরাময় করা অনেকটাই সহজ হবে।