যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় এসে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বৈঠক করেছেন তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারপরই প্রত্যাশিতভাবেই তিব্বত নিয়ে হুমকির স্বরে চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে বিবেচনা না করে, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে তারা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিং জিয়াংয়ের ভাষ্যমতে, ‘চতুর্দশ দলাই লামা পুরোপুরি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন, বরং ধর্মের নামে চীনবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত একজন নির্বাসিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’
চীন-তিব্বত বিরোধ সমাধানের সপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাশ হওয়া আইনকে যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমর্থন না করেন, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি ভারতকেও কিছুটা বার্তা দিয়ে নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসও মুখ খুলেছে। নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাস এক দীর্ঘ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে চাই, দলাই লামা গোষ্ঠীর চীন বিরোধিতা এবং তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানকে তারা বুঝুক। বিশ্বকে ভুল সংকেত পাঠানো বন্ধ করুক’।’
অন্যদিকে, ভারতেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে বেইজিংকে উদ্দেশ্য করে পেলোসির বক্তব্য হলো, ‘ধর্মগুরু দলাই লামা দীর্ঘজীবী হবেন এবং তার পরম্পরা চলতেই থাকবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট (চীনের), আপনি যখন যাবেন, কেউ আপনাকে কোনো কাজের জন্যই কৃতিত্ব দেবে না। দলাই লামা হয়তো চাইবেন না আমি এভাবে চীনা সরকারের সমালোচনা করি। তিনি হয়তো বলবেন, আমরা প্রার্থনা করি যাতে ন্যান্সি এই নেতিবাচক আচরণ থেকে মুক্তি পান! তবে আশা করব, তিনি আজ আমাকে এটা বলতে দেবেন যে, পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন আর তিব্বতের মানুষের আশাভরসা যাবতীয় তফাৎ গড়ে দেবে।’
এদিকে, আগেই লাদাখে ভারতের জমি দখল করে বসে আছে বেইজিংয়ের লাল ফৌজ। নরেন্দ্র মোদি সরকার তার প্রায় পুরো দ্বিতীয় পর্বজুড়ে নানাভাবে চেষ্টা করেও সামগ্রিকভাবে চীনা সেনাকে পশ্চাদপসরণ করাতে পারেনি। ফলে তিব্বতের তাস যদি যুক্তরাষ্ট্র খেলে, তা ভারতের জন্য সুবিধাজনক।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস সম্প্রতি ‘তিব্বত-চীন বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহ প্রদান’ আইন ৩৯১-২৬ ভোটে পাশ করেছে। সিনেটেও তা পাশ হয়ে গিয়েছে।
ওই আইন অনুযায়ী, তিব্বতের ইতিহাস, মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্পর্কে চীনের মিথ্যা তথ্যের মোকাবিলা করতে অর্থ সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিব্বত তাদের অংশ বলে চীন যে দাবি করে, সেই ভাষ্যের পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই আইনে।
তিব্বতের নেতাদের সঙ্গে চীনের যে আলোচনা ২০১০ সাল থেকে বন্ধ হয়ে আছে, তা চালু করার জন্য বেইজিংয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে তিব্বত নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছনো যায়। এই আইনকে ভারত পরোক্ষভাবে কী করে কাজে লাগায়, তার ট্রেলার এনডিএ সরকার গড়ার পক্ষকালের মধ্যেই দেখা গেল বলে অনেকেই মনে করেছেন।