প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি চীনের যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-07-01 16:51:56

বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এখন দৃশ্যমান। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, অপরদিকে চীনের নেতৃত্বে রোড অ্যান্ড বেল্ট উদ্যোগসহ একাধিক বৈশ্বিক উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে। এমন সময় চীনের প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির খবর দেশটির যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দশকব্যাপী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে খবর চীনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফু ও ওয়েই ফেংহেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে। এনিয়ে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) উচ্চপদে অস্বস্তি শুরু হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র সাত মাস দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফুকে এবং পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে সরিয়ে দেওয়া হয় ওয়েই ফেংহেকে। ইতোমধ্যে দুর্নীতির তদন্তের পর ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরও বলা হয়, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফু ও ওয়েই ফেংহেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত দেশটির সেনাবাহিনী করছে বলে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেইজিংয়ের স্থানীয় একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে।

সিএনএন জানায়, গত গ্রীষ্মের পর থেকে চীনের প্রতিরক্ষা বিভাগে শুদ্ধি আভিযানে বাদ যাওয়াদের মধ্যে এই দুজনই সবচেয়ে বড় মাথা। এছাড়াও সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স থেকে এক ডজনেরও বেশি সিনিয়র জেনারেল এবং নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন এবং বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখলে আনতে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন একটা সময় প্রতিরক্ষায় দুর্নীতিকে চীনের দুর্বল দিকই ফুটে উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারাভিযান সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ স্তরের এমন দশা দুর্নীতি প্রতিরোধে বাধার হয়ে দাঁড়ায়।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন গবেষণা ফেলো জেমস চার বলেছেন, যদিও শি জিনপিং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এটি কঠিন, তাই দুর্নীতি অব্যাহত থাকবে।

অস্ত্র সংগ্রহে দুর্নীতি

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি-পিএলএ-কে যুদ্ধের জন্য বিশ্বমানের শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং সরঞ্জাম কেনা এবং আধুনিক করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে। শিং জিনপিং রকেট ফোর্স তৈরি করেছেন, এটি এমন একটি অভিজাত শাখা যা দেশের দ্রুত সম্প্রসারিত পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের তদারকি করে।

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফু ও ওয়েইসহ গত বছর ব্যাখ্যা ছাড়াই বরখাস্ত বা নিখোঁজ হওয়া বেশিরভাগ জেনারেলই রকেট ফোর্স বা সামরিক সরঞ্জামের সাথে যুক্ত ছিলেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার আগে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফু পাঁচ বছর পিএলএ এর সরঞ্জাম উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ছিলেন। পিএলএ সদর দফতরে পদায়ন হওয়ার আগে ৬৬ বছর বয়সী লি চীনের রকেট এবং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে কয়েক দশক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কাটিয়েছেন। তিনি একজন প্রকৌশলীও।

৭০ বছর বয়সী ওয়েই রকেট ফোর্সের উদ্বোধনী কমান্ডার ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের শেষের দিকে পিএলএ আসার আগে কয়েক দশক ধরে কাজ করেছেন সেকেন্ড আর্টিলারি কর্পস ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীতে। রকেট ফোর্সে ওয়েই এর দুই উত্তরাধিকারীকেও আভিযানে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণার পর লির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো স্পষ্টভাবে অস্ত্র সংগ্রহে দুর্নীতির দিকে ইঙ্গিত করে।

চীনা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুষ নেওয়া, দেওয়া এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি লির বিরুদ্ধে সামরিক সরঞ্জাম খাতের নিয়মকানুনে মারাত্মক অনিয়মের অভিযোগও আনা হয়েছে।

মার্কিন পেন্টাগনের অর্থায়নে চলা ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির সিনিয়র গবেষক জোয়েল উথনো বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো যে অস্ত্র তৈরি করে তার সঙ্গে পিএলএর সংগ্রহ ব্যবস্থার মধ্যে যোগসাজশ নির্দেশ করে। আমরা জানি কিছু যোগসাজশ আছে, কিন্তু এটা স্পষ্ট নয় - এবং সিসিপি এটা স্বীকার করবে না।

তিনি আরও বলেন, যেসব অস্ত্র কেনায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, সেসব অস্ত্র যদি নিম্নমানের প্রমাণিত হয়, তা হবে শিং জিনপিংয়ের জন্য ভয়ংকর খবর। কারণ তখন কেবল নৈতিকতা নয়, প্রকৃত সামরিক প্রস্তুতি নিয়েও সন্দেহ তৈরি হবে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, পিএলএ-র ক্রয় ব্যবস্থায় সমস্যা বহু বছরের পুরোনো।

২০১৮ সালে চীনের নেভাল ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাডিতে দেখা গেছে, নৌবাহিনীর সরঞ্জাম সংগ্রহ কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন পিএলএ এর সরঞ্জাম সংগ্রহে বিড কারচুপির বিশ্লেষণ করেছে। তারা তখন পিএলএ এর বিডিং ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর