যে কারণে ৩ বছরে ৩ প্রধানমন্ত্রী দেখলো যুক্তরাজ্য

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-07-01 19:41:42

যুক্তরাজ্যে প্রায় পাঁচ বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সমর্থনে দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঋষি সুনাক। এর আগে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতে অস্থিরতার কারণে পরপর দুইজন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। যার ফলে গত তিন বছরে তিনজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন দেশটির জনগণ।

এদিকে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ভোট দিবেন দেশটির জনগণ। আর মাত্র ৩ দিন পরেই ভাগ্য নির্ধারিত হতে যাচ্ছে দেশটির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির। ব্রিটিশ ভোটাররা বেছে নিতে চলেছেন তাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে।

নির্বাচনে কেইর স্টারমারের নেতৃত্বে বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টির ঐতিহাসিক জয় এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে প্রায় সবগুলো জরিপ।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক লেবার পার্টির ভূমিধস বিজয় রোধ করতে রক্ষণশীলদের প্রতি ভোটারদের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া রিফর্ম ইউকে, গ্রিনস এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের মতো ছোট দলগুলো প্রধান দুই দলের প্রতি অসন্তোষকে পুঁজি করে সুইং ভোটার বা ভাসমান ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

নির্বাচন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যুক্তরাজ্য গত তিন বছরে তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে ঋষি সুনাক দায়িত্ব নেওয়ার আগে যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত ছিল। তার আগে বরিস জনসন এবং লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বরিস জনসন। ২০২২ সালের ৭ জুলাই পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পার্টিগেটসহ নানান কেলেঙ্কারির কারণে মন্ত্রীদের গণবিদ্রোহের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

করোনা লকডাউনের সময় বিধিভঙ্গ করে মদপার্টির আয়োজনের ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্কের ঘটনাকে পার্টিগেট কেলেঙ্কারি বলা হয়ে থাকে।

২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযোগ ওঠে লকডাউনের ওই সময় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিকবার নিজের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীসহ মদপার্টির উদযাপন করেছেন। পুলিশি তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলার পর এটি পরিচিতি পায় ‘পার্টি গেট কেলেঙ্কারি’ নামে এবং এই কেলেঙ্কারির জেরে ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ৫৮ বছর বয়সি বরিস জনসন। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বরিস জনসনই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিধিলঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবং তার জেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিশেষাধিকার কমিটির তদন্তের পরে তিনি ২০২৩ সালের ৯ জুন এমপি পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

জনসনের পদত্যাগের পর, লিজ ট্রাস কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে জয়ী হয়ে ব্রিটেনের চতুর্থ মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর এ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন, দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৫০ দিন পর ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতি টানতে হয় তাকে।

ট্রাস সরকার যেভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করেছে তার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এসবের মধ্যে একটি হলো বিতর্কিত মিনি-বাজেট। যা বাজারের অস্থিরতা এবং জনসাধারণের বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়েছিল। নীতির উপর ধারাবাহিক পরিবর্তন এবং তার এমপিদের মধ্যে আস্থা হারানোর কারণে তার নেতৃত্বকে আরও ক্ষুণ্ন হয়।

কনজারভেটিভ পার্টি বিশৃঙ্খলার কারণে কিছু এমপি ট্রাসের পদত্যাগের আহ্বান জানান এবং অন্যরা নেতৃত্বের পরিবর্তনের দাবি করেন। ফলে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ঋষি সুনাক নির্বাচিত হন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর