গাজায় নিহত ইসরায়েলি নারী চিকিৎসকের মায়ের আর্তনাদ

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-09-19 14:06:21

গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো কোনো ইসরালি নারী চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। তার নাম আগাম নাইম। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২০। তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্টাফ সার্জেন্ট পদের একজন প্যারামেডিক হিসেবে কাজ করতেন।

৬ মাসের দায়িত্ব পালন শেষে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গাজা থেকে তার ইসরায়েল ফিরে আসার কথা ছিল।

দায়িত্ব থেকে নিয়মিত ছুটি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বিদেশে যেতে পাসপোর্ট নবায়ন করেছিলেন আগাম নাইম। এর আগেই গাজায় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বোমা হামলায় নিহত হলেন। এ ঘটনার পর তার পরিবারে গভীর শোক নেমে এসেছে।

আগাম নাইম অনার্স শেষ করার পর পরই তাকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একজন চিকিৎসক হিসেবে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার গাজায় একটি ভবনে বোমা বিস্ফোরিত হলে তিনজন ইসরায়েলি সেনাসহ তিনিও নিহত হন।

আগাম নাইমকে গাজা যুদ্ধে পাঠানোর খবর জানার পর তার পরিবারের সদস্যরা এক অজানা ভয়ে ছিলেন। এ কথা জানিয়েছেন তার চাচা মুরিয়েল।

আগাম নাইম দলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগাম নাইমের ছুটি হয়ে গিয়েছিল সোমবার। কিন্তু নতুন কোনো চিকিৎসক না আসার আগ পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ফিরে বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তার। সে জন্য তিনি তার পাসপোর্ট নবায়ন করিয়েছিলেন। কিন্তু তার আর দেশে ফিরে আসা হলো না!

তিনি আরো জানান, আগাম নাইম তার ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার যখন তিনি ইসরায়েল ফিরবেন, তারপর তার ফোন অন করার কথা ছিল।
আগামের জন্ম ইসরায়েলের কারকুরে। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পারডেস হান্নাতে বসবাস করতেন তিনি। আগামের ৪ সদস্যের পরিবার। বাবা, মা ও দুই বোন। আগাম নাইম ছিলেন ছোট।

খুবই হাসিখুশি ছিলেন আগাম নাইম। তিনি দৃঢ় চিত্তের এবং খুবই স্বাধীনচেতা মেয়ে ছিলেন বলে জানান তার চাচা মুরিয়েল।
তিনি বলেন, আগাম যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলতে পারতো। সে জানতো, সে কী চায়। এ কারণে তার অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল।
গাজায় যুদ্ধে যাওয়ার আগে আগাম নাইম কিবুটজ হারডাফের ছেলেদের একটি বোর্ডিংয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

আগাম নাইমের পরিবার থেকে জানানো হয়, ১০০-এর মধ্যে ৯৭ পয়েন্ট অর্জন করেছিল আগাম নাইম। এর পুরস্কার হিসেবে তার কমান্ডার আগামকে ৪০১ বিগ্রেডের সঙ্গে গাজায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানেই তার জীবনের পরিণতি ঘটলো!

জানা যায়, ঠিক ২ মাস আগে তার মা ফেসবুকে এক পোস্ট লেখেন, আমি যখন জানতে পারলাম আমার মেয়ে সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে গাজায় গেছে, সে খবর শুনে আমি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং আমার ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়।

আগাম যখন একজন প্যারামেডিকের কাছ থেকে জানতে পারলো, ওই প্যারামেডিক গাজায় আহত হয়েছেন, সেসময় সে ভয় পেয়েছিল। তবে সে আমাকে বলেছিল, সে ঠিক আছে!

একদিন তার চিকিৎসক হওয়ার কথা ছিল। কী বড় ভালোই না হতো! তার কোর্স শেষ হওয়ার মাত্র দুইদিনের ভেতরেই গাজায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আগাম নাইমের মা ফেসবুক পোস্ট লিখেছেন, আমি যখন জানতে পারলাম, নামারে অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল বিস্ফোরণে ৮ জন ইঞ্জিনিয়ারিং সৈন্য নিহত হয়েছে, সেদিন আমার মেয়ে আগাম অন্য প্লাটুন কমান্ডারের সঙ্গে বাসায় অবস্থান করছিল।

সেসময় আমাকে একজন ফোন করে জানতে চান, আগামের কোনো খবর জানেন? আমি উত্তরে বলি, না, কেন?
এরপর তিনি জানান, একজন প্যারামেডিক আহত হয়েছেন। তার কথা শোনামাত্র আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আরেকটি ফোনকল এলে জানতে পারি, জেনিনে একজন প্যারামেডিক আহত হয়েছেন। এরপর কেউ জানাতে পারেনি যে, আগাম কোথায় আছে।

তিনি ফেসবুকে আরো লেখেন, আমরা আশা করেছিলাম যুদ্ধ শেষে আগাম ফিরে আসবে। তারপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে সে। কিন্তু এ কী হলো!
শেষে আগামের মা লেখেন, মা আমি তোমার জন্য গর্বিত! তুমি দেশে ফিরে আসো! আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি!

এ সম্পর্কিত আরও খবর