যুদ্ধের ভারে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে ধস নামার শঙ্কা

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-09-29 09:19:33

উত্তর ইসরায়েলে শেলি লোটানের খাদ্যবিষয়ক স্টার্টআপ কোম্পানির যাত্রা কেবল শুরু হয়েছে। ঠিক তখনই এক বছর আগে গত অক্টোবরে সীমান্ত জুড়ে হিজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করে এবং সরকার এ অঞ্চলের সবাইকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার দোকানের পাঁচজন কর্মচারীর মধ্যে দুজনকে সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়। যে কর্মচারীদের ডাকা হয়নি, তারা আরেক কর্মচারীর বাবা-মায়ের বাসার ভূগর্ভস্থ কক্ষে সেই স্টার্টআপের কার্যালয় সরিয়ে নেন। এতে তার ব্যবসায় বিনিয়োগের গতি কমে গেছে।

ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলারও প্রায় এক বছর হতে চলেছে। গাজা-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং লেবাননে সম্ভাব্য আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধের কারণে লোটানের ব্যবসা সবেতেই ঝুলে আছে। এদিকে দেশটিতে দুই দেশে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অর্থনীতিতে নিম্নধারার প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিসি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে চলতি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। সেই দিন অনেকে নিহত, আহত এবং অনেককে অপহরণ করা হয়। টানা এক বছরের অশান্তি এবং ট্র্যাজেডিতে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুদ্ধের কারণে দেশটির ইসরায়েলের ঋণমান অবনমন হয়েছে এবং মোটদেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দ্রুত সঙ্কুচিত হয়েছে। কয়েক হাজার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক চাকরি হারিয়েছে। কোম্পানিগুলো দূরবর্তী জায়গা থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী কর্মরতরা সৈনিক জীবনের সঙ্গে মূল ক্যারিয়ারের ভারসাম্য আনতে হিমশিম খাচ্ছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ২ লাখ ৮৭ হাজার নাগরিক রিজার্ভ সেনা হিসেবে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। ইসরায়েলের জনসংখ্যা এক কোটির কম। অর্থাৎ দেশটির এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ যুদ্ধক্ষেত্রে আছেন। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি কীভাবে চলছে, তা বড় প্রশ্ন।

যদিও ইসরায়েলের বিশাল উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প রয়েছে। তবে দেশটির নির্মাণ ও কৃষি খাতে গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতি বাতিল করায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

যুদ্ধের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এই এক বছরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যয় অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক বার্তা, ২০২৫ সালের মধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধজনিত ক্ষতি ৬৭ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। লেবাননে ইসরায়েলের চলমান হামলার আগেই এই পূর্বাভাস দিয়েছিল ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বাস্তব ক্ষতি এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। পর্যটনের ওপর অতি নির্ভরশীল পুরোনো জেরুজালেমের অর্থনীতি রীতিমতো ধসে পড়েছে। সেখানে অনেক ফিলিস্তিনির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে তাঁরা যে পুনরায় ব্যবসা চালু করবেন, তেমন সম্ভাবনাও নেই।

ইসরায়েলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান শোরেশ ইনস্টিটিউশন ফর সোশিওইকোনমিক রিসার্চের প্রধান ড্যান বেন ডেভিড ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ইসরায়েলের অর্থনীতি বড় ধরনের বিপদে আছে; সরকারকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন সরকারের সব মনোযোগ যুদ্ধ নিয়ে। এর অবসানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের অর্থনীতি এমনিতে যথেষ্ট শক্তিশালী। মূলত প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতের বড় কেন্দ্র হিসেবে সে দেশে বিপুলসংখ্যক স্টার্টআপ কোম্পানির কার্যক্রম আছে। গবেষণা ও উন্নয়নের জগতে ইসরায়েল বড় এক নাম।

পর্যটকরা চলে গেছে

যুদ্ধের প্রভাবে দেশটির পর্যটন খাতের ব্যবসা কমেছে ৭৫ শতাংশের বেশি। জেরুজালেমের পুরোনো শহর এমনিতে পর্যটকে গিজগিজ করলেও সেই এলাকার অনেক দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে।

জেরুজালেমের পুরোনো শহরে আয়মান শাওয়ারের পারিবারিক বেকারির ব্যবসা ৭ অক্টোবরের পর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আইসক্রিম বিক্রেতা আব্দুল কাদের আলামির ব্যবসাও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

তিনি জানান, তিনি তার দিনগুলো সহকর্মী ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী মালিকদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটান। যাদের মধ্যে অনেকেই তাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে ব্যবসার বিষয়ে তারা ভাবতেও পারছেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় কয়েক দশক ধরে কাজ করে নিজ দেশে এসে এ ব্যবসা ধরেছেন তিনি। ব্যবসা বন্ধ হলে, আমি ক্ষুধার্ত হব।

তিনি বলেন, অর্থনীতি পর্যটক নির্ভর ছিলো, পর্যটকরা চলে গেছে। কোনো অর্থনীতি নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর