সময়টা ২০১৪ সাল। জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত সিনিয়র সিনেটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই সময়ে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি বুরিসমা'তে একজন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তখন ইউক্রেন বেশ রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ওই সময় জো বাইডেন ও তার ছেলের করা দুর্নীতি ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় কিছু পাওয়া যায়নি।
তবে ঘটনার শেষ এখানেই নয়, চলতি বছর ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেনও তার ছেলের করা দুর্নীতির পুনরায় তদন্তের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেয়া বন্ধ করে দেবেন বলেও হুমকি দেন। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির ফোন কলের তথ্য ফাঁসকারী ছিলেন এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ট্রাম্পের এই ফোনালাপ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ২০১৪ সালের করা দুর্নীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন হস্তক্ষেপ মোটেও ভাল চোখে দেখেননি রাজনৈতিক কূটনীতিবিদরা।
তখন প্রশ্ন ওঠে এতদিন পর কেন ট্রাম্প এই দুর্নীতির তদন্ত করতে চাপ দেন। এর উত্তরটাও ছিল বেশ সহজ। ২০২০ সালের আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ডেমোক্রেট থেকে দাঁড়াবেন জো বাইডেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ বিবেচনায় ট্রাম্প বন্ধু রাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেটি সম্মান হানিকর বলেও মনে করেন কূটনীতিবিদরা। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প তার সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে তদন্ত করার জন্য অন্য দেশের নেতাকে আহ্বান জানাতে পারেন না বলে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে এ ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ইমপিচমেন্ট তদন্ত সঠিক বলেই মনে করছেন নেতারা।
মেয়াদ শেষের আগেই কি ক্ষমতা হারাবেন ট্রাম্প?
একজন ক্ষমতাসীন দলের নেতার বিরুদ্ধে করা অভিশংসন ইস্যুতে তিনি ক্ষমতা হারাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের কিছুদিন আগে করা এমন তদন্তে ট্রাম্প পরবর্তী সরকার গঠন করার স্বপ্ন অনেকটা ধূলিসাৎ হতে চলেছে। শুধু তাই নয় বর্তমানে ক্ষমতায় টিকে থাকা না থাকা নিয়ে ইতোমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
এদিকে ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে অভিনন্দন জানানোর জন্য কথা বলেন। এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রাম্প প্রায় আটবার জেলেনস্কিকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও এ ঘটনা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক।
এদিকে এ নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগের বিষয়টিকে তিনি গায়ে না মেখে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ইউক্রেনের জনগণকে ঢালাওভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা থেকে যেন বিরত থাকেন তিনি।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রিপাবলিকান দল থেকে মনোনীত হয়ে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ বছর মেয়াদে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। সে হিসেব অনুযায়ী ২০২০ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ বারের মতো আবারও রিপাবলিকান দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়াবেন তিনি।
তবে ট্রাম্পকে যদি শেষ পর্যন্ত ইমপিচ করা হয় তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের অভিশংসন ইস্যু ও ট্রাম্প