যে মসজিদে নামাজের সময় কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে

মসজিদ পরিচিতি, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-07-02 21:16:14

ইসলামে কিবলা বলতে সুনির্দিষ্ট কোনো একটি দিককে বোঝানো হয়, যেদিকে মুখ করে মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। আরবি কিবলা শব্দের দ্বিবচন ‘কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলা। পবিত্র নগরী মদিনার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দুই কিবলার স্মৃতিবিজড়িত ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ ইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় প্রাচীন মসজিদ। এ মসজিদেই কিবলা পরিবর্তনে নবী কারিম (সা.)-এর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এখানে নামাজ পড়ার সময়ই নবীজির কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ-সংবলিত অহি আসে।

ইতিহাস এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের নির্দেশ পান শবেমেরাজের সময় অর্থাৎ ৬২১ সালে। এরপর থেকে তিনিসহ সব মুসলমান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদকে কিবলা গণ্য করে নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি ভাবতেন প্রিয় জন্মভূমি এবং হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক ইসলাম প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র ভূমি কাবা বা মসজিদে হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলে আরও ভালো হতো। এজন্য তিনি প্রায়ই আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন এমন কোনো আদেশ ফেরেশতার মাধ্যমে আসে কি না।

পরবর্তীকালে হিজরতের পর নবী কারিম (সা.) অহির আলোকে কিবলা পরিবর্তনের আদেশপ্রাপ্ত হন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কিবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যা আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদে হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, সেদিকে মুখ করো। যারা আহলে কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, পালনকর্তার পক্ষ থেকে এটাই ঠিক। তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নয়।’ -সুরা বাকারা : ১৪৪

মসজিদের বাইরে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন ছাউনি, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনের এ আয়াত হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে যখন অবতীর্ণ হয়, তখন মসজিদে নবী কারিম (সা.) ও সাহাবিরা মদিনার উত্তরে অবস্থিত জেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করছিলেন। কিবলা পরিবর্তনের আদেশ পাওয়ায় নামাজরত অবস্থায়-ই রাসুলুল্লাহ (সা.) বায়তুল মোকাদ্দিসের দিক থেকে পবিত্র কাবার দিকে ফিরে অবশিষ্ট নামাজ আদায় করেন। এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটিতে দুটি ‘মেহরাব’ বা ইমামতির জন্য বর্ধিত অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ এবং মসজিদের আয়তন বৃদ্ধির সময় শুধু একটি মেহরাব রাখা হয়।

নবী কারিম (সা.) মদিনায় আগমনের পর তথা ইসলামি যুগের শুরুতে তৃতীয় মসজিদ হিসেবে ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ নির্মিত হয়। বনি সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এ মসজিদের প্রথম নাম ছিল মসজিদে বনি সালামা। অন্য তথ্যমতে, দ্বিতীয় হিজরি তথা ৬২৩ সালে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা সর্বপ্রথম মদিনা মোনাওয়ারার বনি সালামা অঞ্চল (বর্তমান খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়ক) সংলগ্ন স্থানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।

হিজরি দ্বিতীয় সালে সাওয়াদ বিন ঘানাম বিন কাব এ মসজিদ নির্মাণ করেন। আর শাবান মাসের ১৫ তারিখে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইমামতিতে জোহর নামাজ আদায়ের সময় কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। তবে ঠিক কার ইমামতিতে বা কোন ওয়াক্তের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। নবী কারিম (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের ঊষালগ্নে প্রতিষ্ঠিত মদিনার এ মসজিদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক নামাজ আদায়ের তথ্য উল্লিখিত আছে বিভিন্ন গ্রন্থে।

এরপর ১০০ হিজরিতে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) মসজিদটির পুনর্র্নির্মাণ করেন। এর দীর্ঘকাল পর ৮৯৩ হিজরিতে মসজিদে নববির প্রখ্যাত খাদেম শুজায়ি শাহিন আল জামালি ছাদসহ ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ পুনর্র্নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানি খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আরও বৃহৎ পরিসরে এটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেন।

মসজিদে নামাজ পড়ছেন হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববি থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির আয়তন ৩ হাজার ৯২০ বর্গমিটার। গম্বুজ সংখ্যা দুটি, যার ব্যাস ৮ মিটার ও ৭ মিটার, উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার রয়েছে দুটি। বর্তমানে হাজিদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য এই মসজিদ আল কিবলাতাইন।

সরকারি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, প্রতিদিন শত শত হাজি এই মসজিদে আসেন ও নামাজ আদায় করেন। ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদটিতে সম্প্রতি মদিনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মুসল্লি, হজযাত্রী ও উমরা পালনকারীদের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন ছাউনি স্থাপন করা হয়েছে।

নতুনভাবে আরও বেশ কিছু পরিষেবা যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পথচারীদের চলার প্রশস্ত পথ ও নামাজিদের চলাচলের জন্য এস্কেলেটর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর