হজে কোনো কোরবানি নেই, আছে দমে শোকর

, ইসলাম

হাসান সিদ্দিকী, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 07:59:17

দীর্ঘদিন থেকে আমাদের দেশে একটি ভুল প্রচলিত হয়ে আসছে। বলা হয়ে থাকে, তামাত্তু বা কিরান হজের ছয়টি ওয়াজিবের একটি হচ্ছে- ‘কোরবানি করা’ (ইফরাদ হজে ‘দমে শোকর’ নেই)। তামাত্তু বা কিরান হজে যেহেতু অতিরিক্ত উমরা আদায় করা হয় সেজন্য তার শোকরিয়া আদায়স্বরূপ একটি হাদি জবাই করার কথা ফিকহি (ইসলামি আইনশাস্ত্র) কিতাবে আছে। এটাকে ‘দমে শোকর’ বা ‘শোকরানা দম’ বলে যেতে পারে।

কিন্তু হজের যে সব বাংলা কিতাব লেখা হয়েছে তাতে পাঠকের সুবিধার্থে ‘কোরবানি করা’ অনেকে লিখেছেন। এতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ যেহেতু কোরবানির দিনগুলোর ভেতরে এই দমে শোকর আদায় করা হয়- ফলে সাধারণ হজযাত্রীদের অনেকেই এই ধারণা করতে পারেন এটা সুন্নতে ইবরাহিমের কোরবানি এবং ইতিপূর্বে অনেকে এ নিয়তে কোরবানি করে এসেছেন বলে শুনাও যায়। কারণ কোরবানি বলতে আমরা সুন্নতে ইবরাহিমের কোরবানিই বুঝি। অন্যকোনো কোরবানি নয়। এর বাস্তবতা আমরা সমাজে দেখতে পাই। বিবাহ বা কোনো অনুষ্ঠান অথবা গোশতের দোকানে যে পশু জবাই করা হয় তাকে কোরবানি বলা হয় না। পশু জবাই বলা হয়ে থাকে। শুধু কোরবানির ঈদের দিনগুলোতে সুন্নতে ইবরাহিমের নামে যে পশু জবাই করা হয়, তাকেই আমরা কোরবানি বলে থাকি। এটা আমাদের বাঙালি পরিভাষা।

কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে থাকেন, ‘হাদি’ বা ‘দমে শোকর’ বললে বাঙালি বুঝবে না তাই সহজার্থে কোরবানি লেখা হয়, কিন্তু এই যুক্তি মোটেই ঠিক নয়। কারণ হজের প্রায় বিধানই এমন যে ব্যাখ্যা না করলে বুঝে আসবে না। যেমন- ইহরাম, উকুফে আরাফা, তাওয়াফ ও সায়ি ইত্যাদি শব্দটাগুলোও হাদি বা দমে শোকরের ন্যায়। এই ইহরাম, উকুফে আরাফা, তাওয়াফ ও সায়ি শব্দগুলো কিন্তু আমরা পরিবর্তন করিনি। যথাস্থানে রেখেছি সে অনুযায়ী ‘হাদি জবাই’ বা ‘দমে শোকর’ বললে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অন্যান্য শব্দগুলোর ন্যায় এটাও মানুষ ব্যাখ্যার সঙ্গে বুঝতো।

কোরবানি শব্দ এ জন্য বলা যাবে না, কারণ কোনো হাজি যদি কোরবানি বলতে সুন্নতে ইবরাহিমের কোরবানি বুঝেন এবং সে নিয়তে কোরবানি করে দেশে চলে আসেন তাহলে তার ওপর ৩টি দম (পশু জবাই) ওয়াজিব হবে।

১. হাদি জবাই বা দমে শোকর, ২. দমে শোকর আদায় না করে হালাল হয়ে যাওয়ার কারণে একটি জরিমানার দম ও ৩. আইয়ামে নহর তথা জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ এই তিন দিনের ভেতরে দমে শোকর আদায় না করার কারণে আরেকটি দম। আর এই সবগুলো দম হুদুদে হারামের (হেরেমে সীমা) ভেতর আদায় করতে হবে। অন্য কোথাও আদায় করলে হবে না।

মুআল্লিমুল হুজ্জাজসহ অন্যান্য কিতাবে এই বিধান বর্ণিত আছে।

অতএব বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হজের বাংলা কিতাবগুলো সংশোধন হওয়া উচিত এবং হজের প্রশিক্ষণগুলোতেও এ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার।

তাছাড়া হাদি জবাইকে কোরবানি বলার কোনো যুক্তিও নেই। এই হাদি জবাইকে দমে শোকর বা শোকরানা দম বলা যেতে পারে। অথবা হাদি জবাইও বলা যেতে পারে।

লেখক: উস্তাদ, জামিয়া মদিনাতুল উলুম, ভাটারা, ঢাকা

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

** বদলি হজের লোক বাছাইয়ে সর্তক থাকুন

** পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে

** জেনে নিন হজে উচ্চারিত কিছু আরবি পরিভাষার অর্থ

** ৫১ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দল গঠন

** আল্লাহর ঘর কাবা শরীফের আদবসমূহ

এ সম্পর্কিত আরও খবর