বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত ব্যক্তির নিরাপদভাবে জানাজা ও দাফনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)।
সোমবার (২৩ মার্চ) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন নতুন মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশেও সম্প্রতি ৩৩ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন একাধিক ব্যক্তি। স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক মৃত ব্যক্তির দাফন ও জানাজার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন মোতাবেক একটি নির্দেশনা তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ওই নির্দেশনার বিষয়ে শরিয়তের বিধানও অনুসরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত ব্যক্তির দাফন ও জানাজার বিষয়ে উল্লিখিত ‘করোনা (কোডিভ-১৯) রোগে মৃতব্যক্তির মৃতদেহ নিরাপদভাবে দাফন, সৎকার ও ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেজিও-এর (এসওপি)’ অনুসরণ করার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জনমনে কোনো বিভ্রান্তি, গুজব বা শঙ্কা যাতে না ছড়াতে পারে সে জন্য সঠিকভাবে সবার সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মী, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকসহ মসজিদের ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিনদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী তৈরি করা গাইডলাইন বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহজনক কেউ মারা গেলে প্রথমে অবশ্যই আইইডিসিআরকে জানাতে হবে। এরপর চার সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মরদেহর দাফন বা সৎকারকার্যে কাজ করতে আসবে। তারা ঘটনাস্থলে আসা পর্যন্ত মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এ সময় চার সদস্যের দলের সঙ্গে মৃতের পরিবারের আলোচনা করে নিতে হবে তারা কোথায় দাফন করতে চায়।
মরদেহের গোসল করানো যাবে না উল্লেখ করে আইইডিসিআরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কিন্তু যদি পরিবারের অনুরোধ থাকে তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে।
কাফনের কাপড়ের বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, সেলাইবিহীন সাদা সুতি কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তারপর মৃতদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগ বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
নির্দেশনায় করোনা ভাইরাসে মৃত বা সন্দেহজনক মৃতের ময়নাতদন্ত করতেও নিষেধ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, মৃতদেহ যে গাড়িতে করে নেওয়া হবে তাতে অবশ্যই দু’টি অংশ থাকতে হবে। যে অংশে মৃতদেহ থাকবে সে অংশে কেউ অবস্থান করতে পারবে না। পরিবহনের পর গাড়ি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। দাফনের সময় মৃতদেহের ব্যাগ কোনোভাবেই খোলা যাবে না।
দাফন সম্পন্ন হবার পর কবরের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া ওই ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন সে স্থানটিও দ্রুততার সঙ্গে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
আরও পড়ুন:
মহামারি প্রসঙ্গে ইসলামের পরামর্শ ও দোয়া
বিপদে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন
করোনা থেকে বাঁচতে আল্লামা শফীর পাঁচ পরামর্শ
সাময়িকভাবে মসজিদ বন্ধ রাখা বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
রোগ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
করোনা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় স্বস্তি
‘সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত পালন সম্ভব’
নবী করিম সা.-এর শিক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন
করোনায় গাফিলতি নয়, সর্বোচ্চ সতর্কতাই কাম্য