যেকোন কারণে, যেকোন স্থানে ও যেকোন সময়েই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত বিড়ম্বনা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা, শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক চাপ ও অস্থিরতা সহ নানান কারণেই এমনটা হতে পারে।
তবে অজ্ঞান হবার আগে থেকেই শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এর মাঝে মাথা ঘোরাভাব একেবারেই কমন একটি লক্ষণ। এই লক্ষণটির সঙ্গে আরো যে সকল লক্ষণ প্রকাশ করে অজ্ঞান হবার সময় আসন্ন, তা তুলে ধরা হলো।
চোখের সামনে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের দাগ দেখার মাধ্যমেই অজ্ঞান হবার প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। এমনটা হবার কারণ হলো অক্ষিগোলকের (আইবল) উপর চাপ পড়ে। রক্ত নিচের দিকে প্রবাহিত হবার ফলে রক্তনালীকার উপরে চাপ পড়ে। যার ফলে এমনটা হয়ে থাকে বলে জানান নিউ ইয়র্ক মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির প্রফেসর জুলিয়ান স্টুয়ার্ট। চোখের সামনে এমন দাগ দেখা দিলে, তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও বসে দুই হাঁটুর ভাঁজে মাথা রাখতে হবে। এমনভাবে বসার ফলে রক্ত সরাসরি ব্রেইনে প্রবাহিত হবে এবং জ্ঞান হারালেও মাথা ও ঘার সুরক্ষিত থাকবে।
রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ/ সরু হয়ে আসার সমস্যা দেখা দেয়। যাকে টানেল ভিশন বলা হয়। স্টুয়ার্ট বলেন, ‘এমনটা হলে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত কোথাও শুয়ে পড়তে হবে। বারবার চোখের পলক ফেললেও এই সমস্যাটি দূর হবে না’।
অজ্ঞান হবার আগে বেশিরভাগ মানুষের হাইপারভেনটিলেশন এর সমস্যা হয় বলে জানান স্টুয়ার্ট। এমনটা হবার ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ফলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এতে করে শরীর অক্সিজেন পাওয়ার জন্য দ্রুত নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। এমন সমস্যায় কোথাও বসে চোখ বন্ধ করে পেটের উপর দুই হাত রেখে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের পেটকে বেলুনের মতো মনে করে নাক ও মুখ দিয়ে বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করলে শরীর তার প্রয়োজন অক্সিজেন পাওয়া শুরু করবে।
ব্রেইনে রক্ত চলাচলের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হুট করেই কমে যায়। এমনটা হবার ফলে আঙ্গুলের মাথায় ও ঠোঁটে শিহরণ অথবা অবশ বোধ হতে থাকে। এমন হলে দ্রুত পরনের বেল্ট, কলার অথবা আঁটসাঁট পোশাক খুলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। আরামদায়ক কোন স্থানে হাত-পা ছড়িয়ে বসতে হবে। এতে রক্ত চলাচল দ্রুত হবে এবং এই দুইটি স্থানে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
শরীরের যে সকল স্থানে রক্ত চলাচলের প্রয়োজন, সেখানে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া এবং অন্যান্য স্থানে রক্ত চলকাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। রক্তপ্রবাহের এমন সমস্যা দেখা দেওয়ায় শরীরে ঘাম হয়, অতিরিক্ত গরম বোধ হতে থাকে। এমনটা হলে পানি পান ও ঠাণ্ডা হাওয়াযুক্ত স্থানে বসার পরামর্শ দেন স্টুয়ার্ট।
ফুড পয়জনিং, গর্ভধারণ সহ নানান কারণেই বমিভাব দেখা দিতে পারে। তবে উপরিউক্ত কোন লক্ষণের সঙ্গে যদি প্রবল বমিভাব দেখা দেয় তবে বুঝতে হবে এটা অজ্ঞান হবার পূর্ব লক্ষণ। এমনটা হলে রোদের আলো থেকে দূরে, অর্থাৎ ছায়াযুক্ত কোথাও দ্রুত শুয়ে পড়তে হবে এবং পানি পান করতে হবে। সম্ভব হলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।