খুব সাধারণ ও প্রাকৃতিকভাবেই গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীর ও মনের উপর পরিবর্তনের ছাপ চলে আসে। এইসব কিছুকে পাশে রেখেই অফিসে নিজেকে উপস্থাপন করা, প্রতিদিন সঠিক সময়ের অফিসে উপস্থিত হওয়া, কাজের চাপকে মাথায় নিয়ে কাজ শেষ করা এবং সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজের প্রতি খেয়াল রাখা মোটেও সহজ নয়।
সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে প্রতিটি কর্মজীবী নারী তাদের গর্ভাকালীন সময়টুকু পার করেন। এ সময়ে শুধু নিজের কথা নয়, গর্ভস্থ শিশুর কথাও মাথায় রেখে চলতে হয়। তাই অফিস করেও নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপর যত্নশীল হতে হবে। গর্ভবতী কর্মজীবী প্রতিটি নারীর কিছু বিশেষ বিষয়ের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
শুধু কর্মজীবী নারীর জন্যেই নয়, যেকোন গর্ভবতী নারীর জন্যেই স্বাস্থ্যকর ও ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলা আবশ্যক। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না একেবারেই। অফিসে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকাল/ সন্ধ্যার নাস্তায় কি খেতে হবে সেটা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখতে হবে। ডায়েটে যদি প্রতিদিন দুধ ও ডিম থাকে, তবে সেটা মেনে চলতে হবে। পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের উপরে হবু মা ও আগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের অনেকাংশ নির্ভরশীল।
গর্ভাবস্থায় একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথাভাব দেখা দেয়, ক্লান্তিভাব চলে আসে এবং পায়ে পানি আসার সম্ভবনা তৈরি হয়। তাই চেষ্টা করতে হবে প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তত ১৫-২০ মিনিটের জন্য স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করার জন্য। এতে করে শরীরের পেশী রিল্যাক্স হবে এবং ফুরফুরে ভাব কাজ করবে।
স্বাভাবিকভাবেই গর্ভকালীন সময় যত গড়াতে থাকবে শারীরিক অস্বস্তি বাড়তে থাকবে। তাই এই সময়ে পোশাক নির্বাচন করতে হবে নিজের আরামকে প্রাধান্য দিয়ে। বিশেষত বুকের নিচের দিক থেকে পেটের কাছের অংশে একেবারেই ঢিলেঢালা পোশাক পরার চেষ্টা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ফিটাসের উপর যেন কোন চাপ না পড়ে। সুতি তন্তুর পোশাক পরলে সবচেয়ে আরাম পাওয়া যাবে এসময়ে।
শুধু প্রতিবেলার খাবার যথেষ্ট নয়। সকালের নাস্তার পর দুপুরের আগে ক্ষুধাভাব দেখা দিবে। এমনকি দুপুরে খাওয়ার পরেও ক্ষুধাভাব দেখা দিতে পারে বিকালের আগে। এ সময়ে অস্বাস্থ্যকর প্রসেসড খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে যথাসম্ভব। ফলের সালাদ, সবজী রান্না কিংবা বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সঙ্গে পানিও পান করতে হবে পর্যাপ্ত। পানি ছাড়াও সঙ্গে রাখতে হবে ঘরে তৈরি ফলের রস, দোকানের জ্যুস নয়। এই সকল জ্যুসে পুষ্টিগুণাগুণ একেবারেই থাকে না। উপরন্তু ক্ষতিকর কেমিক্যাল, প্রিজার্ভেটিভ ও চিনি থাকে। যা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
বাসার কাজ ও অফিসের দায়িত্বের মাঝে ঘুম যদি কম হয় তবে নানাবিধ সমস্যা দানা বাঁধতে শুরু করবে। স্বাভাবিকভাবেই গর্ভকালীন শেষ সময়ের দিকে ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীরে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত বিশ্রামের। চেষ্টা করতে হবে রাতে যথাসম্ভব আগে শুয়ে পড়ার এবং প্রতিদিন অন্তত আট ঘন্টা ঘুমানোর।
একজন গর্ভবতী মা নিজেই বুঝতে পারবেন তার ও সন্তানের জন্য কোন কাজটি উপকারি কিংবা বিপদজনক। নিজের প্রতি যত্ন ও খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে তাই ছাড় দেওয়া যাবে না মোটেও।
আরও পড়ুন: ব্যস্ততা ও সুস্থতা থাকবে একসাথে!
আরও পড়ুন: ঘুমের সমস্যা নিয়ে আর নয় দুশ্চিন্তা!