সারাদিন শেষে বাড়ি ফিরে প্রিয় বিড়াল ছানা, খরগোশ বা কুকুরটিকে কোলে নিয়ে আদর করে একমনে গল্প বলা, তাদেরকে সারাদিনে কি ঘটলো, কোন ঘটনায় মন খারাপ হলো, কোন কাজে মন ভালো হলো- এই সব কিছু শেয়ার করা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা অনেকের কাছেই। এমনকি পরপর কয়েকদিন প্রিয় প্রাণিটির সঙ্গে দেখা না হলেও মনের মাঝে অস্থিরতা কাজ করে, অশান্তি দেখা দেয়।
কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এক মনে পোষা প্রাণিটির সঙ্গে কথা বলার অভ্যাসটার বিষয়ে। যাদের নিজস্ব পোষা প্রাণি নেই, তারা আপনাকে পোষা প্রাণির সঙ্গে এক মনে কথা বলতে দেখলে একটু অবাকই হবে। অথচ বিজ্ঞানসম্মতভাবে পোষা প্রাণির সঙ্গে কথা বলার অভ্যাসটি হলো বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন!
কথা বলার সময় পোষ মানা প্রাণিটি তাদের মাথা এদিক-ওদিক করে, মাথা উঁচু করে এবং বিভিন্ন ধরণের অঙ্গভঙ্গিও করে। তবে তাদেরকে বলা গল্পের বেশিরভাগ কথাই বুঝতে সক্ষম নয় এই প্রাণিগুলো। তারপরেও এমন অভ্যাস বা আচরণটি কেন গড়ে ওঠে?
বিহেভারিয়াল সায়েন্টিস্ট ও ‘মাইন্ডওয়াইজ: হোয়াই উই মিসআন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আদার্স থিংক, বিলিভ, ফিল অ্যান্ড ওয়ান্ট’ বইটির লেখক ডাঃ নিকোলাস এপলি ব্যাখ্যা করেন, মানুষ ও পোষা প্রাণির মাঝে কথোপকথনের এই সম্পর্কটি গড়ে ওঠে অ্যানথ্রোপমরফিজম (Anthropomorphism) এর দরুণ। এর টার্মটির অর্থ হলো, কোন প্রাণি কিংবা জড় বস্তুর মাঝে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও মিল খুঁজে পাওয়া বা মিল পাওয়া।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অ্যানথ্রোপমরফিজম কে শিশুসুলভ আচরণ মনে করা হলেও, এটা আদতে মানুষের একেবারেই অনন্য আচরণগত একটি বৈশিষ্ট্য, যা মানুষদের মাঝে বাইপ্রোডাক্ট উপস্থিত থাকে। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষের মাঝেই এই বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ করা যায়। এই গুণটি অন্য কোন প্রাণির মাঝে নেই।
এপলি জানান, মানুষ ও তার পোষা প্রাণির মাঝে কথোপকথনের অভ্যাস থেকে বোঝা যায় যে এই আচরণগত দিক থেকে মানুষ আনপ্যারালালি অদ্বিতীয় এবং একমাত্র মানুষই অন্যান্য জীব ও জড়ের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বুঝতে সক্ষম।
‘অন্য মানুষের মনকে বুঝতে পারা ও অন্য পশু, ঈশ্বর, জড় পদার্থ, গ্যাজেটকে বুঝতে পারা একই মাত্রার সাইকোলজিক্যাল প্রসেসের সঙ্গে সংযুক্ত। এতে সহজেই বোঝা যায় যে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বড় কিছুর জন্য সক্ষম।
এ কারণেই পোষা প্রাণির সঙ্গে কথা বলা, তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর ফলে মানসিক চাপ কমে যায় অনেকটা। তাই প্রিয় প্রাণিটির সঙ্গে কথা চলুক মন খুলে।
আরও পড়ুন: আবিষ্কৃত হলো চিকন থাকার ‘রহস্য’
আরও পড়ুন: কেন আপনি ধনিয়া পাতা অপছন্দ করেন?