সময়, সুযোগ বুঝে পছন্দের প্রাণীর খোঁজ মিললেই ঘরে পালন শুরু করে দেওয়া হয়। তবে বিড়াল, খরগোশ, কুকুর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মাঝে কুকুরকে বেছে নেওয়া হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কুকুর কেন? খুব সহজভাবে যদি এর উত্তর চান তবে বলতে হয়, বেশিদিন বাঁচতে চাইলে কুকুর পালন করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ‘সার্কুলেশন’ জার্নালে গেলো মঙ্গলবার প্রায় ৭০ বছরের একটি বিশ্ব গবেষণা প্রকাশিত হয়। যার প্রধান মাউন্ট সিনাইয়ের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. ক্যারোলিন ক্র্যামের বলেন, ‘আমাদের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, মৃত্যু বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুকুর খুব ভালো প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে।’
মানুষের স্বাস্থ্যের উপর কুকুরের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হয়।
ক্র্যামের বলেন, ‘কুকুর পালনে মৃত্যুর হার কমে যায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত। একইসাথে মেটা-অ্যানালিসিস থেকে দেখা গেছে, যাদের ইতোমধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে তাদের জন্য কুকুর পালন আরও বেশি উপকারিতা বহন করে। এমন ধরনের মানুষের ক্ষেত্রে কুকুর পালনে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর শঙ্কা কমে যায় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত।’
এখানে ছোট করে জানিয়ে রাখি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে পুরো বিশ্ব জুড়েই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এদিকে কুকুর পালন নিয়ে আরও চমকপ্রদ তথ্য জানাচ্ছে অ্যামেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির পেশেন্ট এডুকেশন প্ল্যাটফর্মের এডিটর ইন চিফ মার্থা গুলাটি। তিনি বলছেন, ‘হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের রোগীদের মাঝে যারা কুকুরের সাথে একা বাস করেন তারা সবচেয়ে বেশি উপকারিতা লাভ করেন এবং আক্ষরিক অর্থেই যারা কুকুর পালন করেন তাদের আয়ু অন্যদের চাইতে বেশি হয়।’
এই একা থাকার প্রসঙ্গটি সম্পর্কে আরেকটু খোলাসা করেন সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলোগি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক টভ ফল। তিনি বলেন, ‘এটা আমরা জানি যে একা থাকা ও সমাজবিচ্যুতি থেকে সঠিক বয়সের আগেই মৃত্যু ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কুকুর পালন অনেক ভালো ভূমিকা রাখে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা একা থাকেন তাদের কুকুর বাইরে হাঁটানোসহ বিভিন্ন ধরনের কাজগুলো একাই করতে হয়। এতে করে স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে তাদের হৃদযন্ত্র ভালো হয়ে উঠতে কাজ করে।’
পালিত কুকুরের সাথে কার্যক্রমের বিষয়টি উঠে এসেছে অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণাতেও। দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় যারা কুকুর পালন করেন, তারা অন্তত ৩০ মিনিট সময় বেশি হাঁটেন এবং তাদের কোলেস্টেরল ও রক্তচাপের মাত্রা তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।
আরও দারুণ বিষয় হলো, কুকুর পালনে শুধু হৃদরোগই নয়, দূরে থাকে বিষণ্ণতাও। ভিন্ন একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে কুকুরের সঙ্গ ও ভালোবাসা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতাকে কমাতে কাজ করে। বিষণ্ণতার সমস্যাটি হৃদরোগের চাইতে কম কিছু নয়। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দেখা দেয়।
কুকুর পালনের উপকারিতা বুঝতে পেরে ও তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে দেশের বাইরের কিছু চিকিৎসক তার রোগীদের ওষুধ গ্রহণের পরিবর্তে কুকুর পালনের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের সামাজিক, আবেগ ও অনুভূতি এবং জ্ঞানীয় প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার সাথে তাদের পুরো জীবনযাপনের উপরে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে কুকুর। কিছুক্ষেত্রে কুকুর আগে থেকেই মানুষের শরীরে দেখা দিতে যাওয়া এপিলেপটিক সিজার ও ক্যানসারের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।
নানান গবেষণা ও তার তথ্যউপাত্ত মিলিয়ে এটা বলাই যায়, সুস্থতার সাথে আয়ুকে বাড়াতে চাইলে কুকুর পালন হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়।
আরও পড়ুন: পোষা প্রাণির সঙ্গে কথা বলা হয়?