নিজের ও পরিবারের সবার সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ঘরের ভেতরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। কিন্তু দিনের পর বাসায় আবদ্ধ থাকার ফলে মন বিক্ষিপ্ত হওয়া, অস্থিরতায় ভোগা, উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপও। এ সময়ে বন্ধুর মতো আপন করে নিতে হবে সংগীতকে। চিরদিনের বন্ধু গানই এ সময়ে বাড়িয়ে দেবে সাহায্যের হাত। জানুন সংগীত থেকে কীভাবে মিলবে স্বস্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার ফল অনুসারে, পছন্দের গান উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে। যেকোন গানের ক্ষেত্রে এটা কাজ করবে না। এর জন্য হতে হবে পরিচিত ও পছন্দের বিশেষ কোন গান।
ঘরে শুয়ে-বসে সময় কাটানো হলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া বেশি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর এটা সেটা খেতে ইচ্ছা করে। এমনকি কোন কাজ করতে ইচ্ছা না করলেও কোন খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ জন্মে। সাইকোলজিক্যাল রিপোর্ট নামক জানার্লে প্রকাশিত একটি পরীক্ষামূলক গবেষণার ফল জানাচ্ছে, কোমল ধাঁচের গান ও জ্যাজ মিউজিক খাবার গ্রহণের মাত্রাকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
লম্বা সময় ঘরে আবদ্ধ থাকার ফলে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সহজ কাজেও মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। পছন্দের কাজ করার সময়েও মন থাকে বিক্ষিপ্ত। এ সময়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে গান। যুক্তরাজ্যের নর্থআমব্রিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক দল জানাচ্ছেন, মুড-আপলিফটিং ধরনের গান মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। এমন গান শুনতে হবে যার মাঝে চমৎকার সুর ও তালের সমন্বয় রয়েছে। যে গানগুলো শুনলে মাথা দোলাতে, পা ঝাঁকাতে ইচ্ছা করে সে গানগুলোই এক্ষেত্রে প্রয়োজন।
গান শোনার ফলে যে মানসিক প্রশান্তি ও ভালো লাগা তৈরি হয়, যা রক্ত নালীকাকে প্রশস্ত করে। এতে করে রক্ত চলাচলের মাত্রা উন্নত হয় এবং সার্বিকভাবে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। এমনটাই জানাচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের গবেষকেরা। মন ভালো করার মতো গান শোনার ফলে স্বাভাবিক আপার-আর্ম ব্লাড ভ্যাসেল ডায়ামিটার বৃদ্ধি পায় অন্তত ২৬ শতাংশ পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে বহু প্রতিষ্ঠান বাসায় থেকে কাজ করার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। সে মোতাবেক কর্মীদের বাসা থেকে অফিসের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে এবং একে অন্যের সাথে যোগাযোগ ধরে রাখতে হচ্ছে। অফিসের পরিচিত পরিবেশে সহকর্মীদের সাথে কাজ করার দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততার খোলস ছেড়ে বাড়ির ঘরোয়া পরিবেশে কাজ করা অনেকের জন্য কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতেই পারে। এ সময়ে কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে, দ্রুত ও সহজে কাজ শেষ করার জন্য গানের কাছেই ফিরে যেতে হবে। রিল্যাক্সিং ও আরামদায়ক গান কানে বাজতে থাকা অবস্থায় অফিসের কাজ, মেইল করা, ফাইল তৈরি করা তুলনামূলক সহজ মনে হবে। করনেল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা দেখেছেন, আপবিট ধরনের গান সহকর্মীদের মাঝে ভালো যোগাযোগ ও বোঝাপড়া তৈরি করতে অবদান রাখে।
হাতে যখন একেবারেই অবসর থাকে না, তখন নানা ধরনের সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজের আইডিয়া মাথায় ঘুরঘুর করে। কিন্তু একবার অফুরন্ত সময় মিললেই এ সব কিছু গায়েব হয়ে যায়। নেদারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা জানাচ্ছে, সংগীত সৃজনশীলতাকে অবচেতন ভাবনা থেকে বের করে আনতে ও ত্বরান্বিত করতে খুব ভালো কাজ করে। তবে এক্ষেত্রে খুব বেশি জোরে গান বাজানো যাবে না। গানও হতে হবে আরামদায়ক সুরের। হাতে লম্বা সময় থাকলে গানের সাথে নিজের সৃজনশীলতাকে নতুনভাবে ঝালাই করে নেওয়া যেতেই পারে।