এটা কি মগের মুল্লুক?

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 02:46:49

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ফুটপাতে কেউ কোনো ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রেখে ব্যবসা করতে পারবেন না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশে করে মেয়র বলেছেন, এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? এই শহরের কি কোনো বাপ-মা নাই? যে যার মতো ব্যবসা করবেন, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। আমরা বলেছিলাম ফুটপাতে কোনো নির্মাণ সামগ্রী থাকলে স্পট নিলাম হবে, আজকে সেটা শুরু হয়েছে। অনেকে আমাকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু কোনো ফোনে কাজ হবে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বানানো রাস্তা কেউ দখল করে রাখবে এটা হতে পারে না।

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশান-২ নগরভবন এলাকা থেকে শুরু হয় বিশেষ এই অভিযান। শুরুতেই গুলশান-২ এর ৮৬ নং রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনের ফুটপাত দখল করে রাখায় সেখানকার ডেভেলপার কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ মোহাম্মদ সিদ্দিকীকে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সেখানে রাখা প্রায় ২০ টন রড নিলামে বিক্রি করা হয়। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা ব্যক্তি মাহমুদ মোল্লা ৪৯ হাজার টাকায় রডগুলো ক্রয় করেন এবং সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্সসহ ৫৬ হাজার টাকায় কিনে নেন ২০ টন রড।

এরপর ৯২ নং রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবন ফুটপাত দখল করে ইট রাখায় ডেভেলপার কোম্পানির সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রিপন কুমারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সব ইট নিলামে তুললে তা ট্যাক্সসহ ৮ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

তারপর মেয়রের নেতৃত্বে টিম যায় গুলশান-২ এর ৬৭ নং রোডে। সেখানে ইনস্টার নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রাস্তা দখল করে প্রায় ২০ টন রড রেখে দেয়। পরে সেই রড ওপেন নিলামে তুললে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এরসঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স যোগ করে মোট ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় রডগুলো। এছাড়া সেখানকার এক কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় মেয়র ইনস্টার ডেভেলপার কোম্পানির একজন প্রতিনিধিকে উদ্দেশে করে বলেন, “এই রাস্তা কারো বাপের নাকি? রাস্তায় মাল রাখছে কে? ইনস্টারকে ডাকেন। ইনস্টার কি বাপের সম্পত্তি পাইছে এই রাস্তা? এই রোড কি তার বাপের সম্পত্তি যে রোডের মধ্যে লোহা রাখবে? আমরা রাস্তা ঠিক করব জনগণের টাকা দিয়ে আর ইনস্টার কোম্পানি, ওই কোম্পানি আপনারা রাস্তার মধ্যে ইচ্ছামতো কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদ রেখে দেবেন। এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? ঢাকা শহরে কি কোনো নিয়ম নাই?”

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

আতিক বলেন, “এসব ডেভেলপার কোম্পানিকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তারা আমাদের কথায় পাত্তা দেয়নি।” ডেভেলপার কোম্পানির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বড় বড় কোম্পানি যারা আছেন, যারা ডেভেলপার কোম্পানি আপনারা বাড়ি বানাচ্ছেন আপনাদের বলছি কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন না। যারা ফুটপাতের মধ্যে ইচ্ছামতো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও আইনের তোয়াক্কা না করে যার যার মতো রড-সিমেন্ট রেখে দিচ্ছেন। এটা করা যাবে না। আমরা যখন যেখানে যাবো এবং যা পাবো নিলামে বিক্রি করে দেবো।

মেয়রের কথায়- “রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, স্যানিটারি রেখে রাস্তা ও ফুটপাত নষ্ট করে ফেলছেন। ড্রেন দখল করছেন। মনে হচ্ছে এই শহরের কোনো মা-বাপ নাই। এই শহরের মা-বাপ আছে। এখনই এই মাল আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা তাই করা হবে। ঢাকা শহরে যেখানে এই ধরনের মালপত্র পাবো সব সঙ্গে সঙ্গে নিলামে চলে যাবে। রাস্তায় কেন জিনিসপত্র রাখবেন? এই জায়গার মালিক কে? এটা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি, জনগণের সম্পত্তি। জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে রাস্তা বানাই আর আপনাদের মত বড় বড় ডেভেলপার এসে রাস্তা দখল ও নষ্ট করবে তা আর হবে না।”

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ডেভেলপারদের প্রতি হুঁশিয়ার করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, “ফুটপাতের মধ্যে লোহা থাকবে কেন? ফুটপাতে কোনো মালপত্র রাখতে পারবেন না। রাস্তার মধ্যে কোনো ধরনের সামগ্রী রেখে ব্যবসা করতে পারবেন না। কেউ ফুটপাতের ভেতরে নির্মাণ সামগ্রী রেখে ব্যবসা করতে পারবেন না। ঢাকা শহরকে যত্রতত্রভাবে শেষ করে ফেলবেন এটি হতে দেওয়া যাবে না।”

অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া ও মোজাম্মেল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর