সুন্দরবনে বারবার যে আগুন লাগছে, তা পরিকল্পিত: বাপা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-05-22 16:14:54

বাপার যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনদের কাছে সুন্দরবন গুরুত্বহীন। বারবার যে আগুন লাগছে তা পরিকল্পিত। আগুন লাগার সাথে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত। এ দায়ভার বনবিভাগ কে নিতে হবে।’

বুধবার (২২মে) সকাল সাড়ে এগারোটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলানায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ‘বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন: কারণ ও প্রতিকার’- শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত। বারবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বড় গাছসহ লতাগুল্ম মারা যাচ্ছে। প্রাণিকুলের আবাসসস্থল ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বনের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে প্রাণিকুলের খাদ্যচক্রে আঘাত আসে বাস্তুতন্ত্রে। অগ্নিকাণ্ডে বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় বনবিভাগ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।


তিনি বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারীসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গণমাধ্যমে এসেছে, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫/২৬ বার আগুন লেগেছে; সরকারি হিসেবে প্রায় শতাধিক একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। সুতরাং এর দায়ভার বন বিভাগকেই নিতে হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠি-পরিবেশকর্মী- সংবাদকর্মী- গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা, সুন্দরবনে অপরিকল্পিত খাল খনন এবং অতীতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার কারণেই সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকায় চার বছর পরে আবারো অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হলো।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষিত বন হলেও এখানে অনেক গুলো রাস্তা হয়ে গেছে। মার্চ, এপ্রিল মাসে বর্ষা মৌসুমের আগে মাছ ব্যবসায়ীরা আগুন দিয়ে জায়গা তৈরি করে জাল পাতা ও মাছ ধরার জন্য। যেদিকে বারো মাস মাছ ধরার সুযোগ থাকে সেদিকে আগুন লাগে না। আগুন লাগার সাথে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ব্যর্থ। পানি, বায়ু, শব্দ দূষণ দিয়ে সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট করার সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। সুন্দরবনে ভালো কিছু বা গবেষণার অনুমোদন পেতে প্রতিপদে বাধাগ্রস্ত হতে হয় কিন্তু সেখানে দুষ্কৃতকারীদের পথ সুগম। সুন্দরবন মূলত সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলে ও সুন্দরবন রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষায় ও সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ড বন্ধে ১৫টি সুপারিশমালা তুলে ধরে সংগঠনটি। সুপারিশসমূহ:

১। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ও অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ'র সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

২। অগ্নিকাণ্ডে বিগত দিনের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩। সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ওয়াচটাওয়ার নির্মাণ করতে হবে।

৪। বনের মধ্যে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে।

৫। সুন্দরবন রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে হবে।

৬। ইআইএ ছাড়া সুন্দরবনের মধ্যে অপরিকল্পিত খাল খনন বন্ধ করতে হবে।

৭। বন বিভাগ কর্তৃক মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে হবে।

৮। সুন্দরবন রক্ষায় অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৯। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে।

১১। সুন্দরবন রক্ষায় নীতি নির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে।

১২। ড্রোন ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরাসহ সুন্দরবন রক্ষায় বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

১৩। সুন্দরবনের পরিধিতে, দ্রুত শিল্পায়ন বাড়ানো উচিত নয়।

১৫। সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন- বাপা'র সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মাদ তালুকদার। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের, বাপা'র কোশাধ্যক্ষ ও নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাপার সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর