মানবাধিকার বঞ্চিত যাযাবর জীবনযাপন বেদে সম্প্রদায়ের

, জাতীয়

বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-05-23 07:17:21

নিরাপত্তাহীনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থেকে যাযাবর জীবনযাপন করছে রংপুরের বেদে সম্প্রদায়রা। ঘাঘট নদীর কোল ঘেষে খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের তাবু টানিয়ে বনবাস করেন তারা। নদীর পানির মতোই বহমান অবস্থায় ভাসমান বেদেরা। এক তাঁবুতেই ৭/৮ জনের বসবাস। নেই মানসম্মত পরিবেশ,চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা,নিরাপত্তা কিংবা নির্দিষ্ট বাসস্থান। নির্মম পরিস্থিতিতে কোনরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে তাবু টানিয়ে যাযাবর তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ঘাঘট নদীর কোলঘেষে দমদমা ব্রিজের নিচেই তাবু টানিয়ে ভাসমান তৈরি করেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে অসহনীয় তাপ সহ্য করে,প্রচণ্ড শীতে কুয়াশায় কষ্টসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এভাবেই খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতেই তাদের বসবাস। এভাবেই যুগের পর যুগ চলছে বেদে সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা। মৌলিক অধিকারেরর বেশকিছু সেবা থেকে বঞ্চিত তারা। অথচ তারা এই দেশেরই নাগরিক।

রংপুরের দমদমা ব্রিজের নিচে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত বিজলি বলেন, আমাগেরে জীবন কচুর পানার নাগাল।  আইজ যদি নদীর এইপারে তাবু ফেলাই, কাল ওইপারে। কই থাইয়া কই যামু ঠিক থাহে না। বেদেগেরে জীবন এরহমই। আমাগোর চাওয়া  হইল পইলেরা স্কুলে যাইক, লেহাপড়া কুরুক। আইঙ্কের মতো সাপের খেলা দেহায়া, বিষ পোরা ঔষধ দিয়া গ্রাম ঘুরার মত তাগো না নাগে। কিন্তু পড়ামু কোনো? ছইলগোরে বিনাটাহায় চিকিৎসা, লেহাপড়া, পুষ্টি দেয় অনেক খানেই। এহেনে তেমন কিছুই নাই বললেই চলে।

অস্থায়ীভাবে বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়ের বাসিন্দা চুমকি বলেন, ‘নদীর পাড়ে স্রোতের নাগাল  আমাগো দিন কাটে। প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে বেড়াই দাঁতের পোকা ফেলাই, সিংগা লাগাই, সাপের খেলা দেহাই, মাচা কমর টাইনা দুইডা ট্যাহার মুক দেহি। তাবুই আমাগেরে দালানবাড়ি। এর উপর দিয়া ঝড়,বৃষ্টি, রোইদ কুয়াশা সব সমান। ছইলগরে নিয়া নিরুপায় কি করমু কোন রহমে বাঁইচা আছি৷ এভাবেই চলতে হয়, খুব কষ্ট আমাগেরে। বাড়ি নাই ঘর নাই, নাই ভালো পানি-পায়খানার ব্যবস্থা।’

এ বিষয়ে উন্নয়ন গবেষক উমর ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশের বেদে গোষ্ঠী বা যাযাবর শ্রেণি-আমাদের এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। এখনো তাদের জীবনমান বঞ্চিত অবহেলিত, সেসব সুবিধা বঞ্চিত, অধিকার বঞ্চিত অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে যদি আমরা সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে না পারি, তাদেরকে যদি স্থায়ী নিবাস ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমাদের পুরো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান জানান, ‘এই বেদে জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করার জন্য চেষ্টা করছি, এটি  একটি চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিও আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। সেই সাথে ঝড়ে পরা শিশুসহ শিক্ষার বাইরে যেসব শিশু রয়েছে তাদেরকে নিয়ে কিছু সংগঠন কাজ করছে। দিপ আই কেয়ারসহ কিছু স্কুল আছে এবং আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানতো আছেই। আমরা চেষ্টা করছি।’

জানা যায়, ১০ মাস আগে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর ও ফরিদপুর জেলা থেকে আসা একশটি বেদে পরিবার অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে আছে জেলার এই স্থানটিতে। সাপ খেলা ও তাবিজ বিক্রিই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। জীবিকার তাগিদে বছরের অর্ধেক সময়ই নৌকা নিয়ে ছুটে বেড়ায় দেশের নানা প্রান্তরে। তারাও পরিবার নিয়ে বাঁচতে চায় সাধারণ মানুষের মতো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর