১৭ কোটি মানুষের কাছে নজরুলের কবিতা এখনো পৌঁছায়নি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা | 2024-05-24 13:27:21

দেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে নজরুলের কবিতা এখনো পৌঁছায়নি উল্লেখ করে সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ ফারুক বলেছেন, 'বিশ্বকবি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা যেভাবে সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে, সেভাবে নজরুলের সাহিত্য কবিতা, গান কি দেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে গিয়েছে! না যাওয়ার কারণ কি! এমন ব্যবধান কেন হয়েছে!

আমাদের দেশে নজরুলকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করারা দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। এর জন্য দেশে চিন্তাশীল লোকের প্রয়োজন আছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাছাড়া চিন্তাশীল জাতি তৈরি করা যাবে না। যদিও কোনো জাতি না খেয়ে মারা যায় না! মারা যায়, তখনই যখন তার চিন্তা করারা কোনো শক্তি থাকে না! তাই, সে জায়গায় নজরুল আমাদের অনেক চিন্তার জায়গা তৈরি করেছেন।

শুক্রবার (২৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকর খান মিলনায়তনে 'সাম্য কবি, ন্যায়ের কবি, দ্রোহের কবি, সম্প্রীতির কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাংলাদেশ আগমন দিবস’ স্মরণে উন্মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ ফারুক এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ‘স্বপথ' ও অগ্নিবীণা নজরুল চর্চা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান’।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, নজরুলের যে চরিত্র, তাতে দরিদ্রতাকে তাকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা দরিদ্রতা নিয়ে কখনো চিন্তা করতে পারি না। কিন্তু নজরুল দারিদ্র্যকে খ্রিস্টের মতোন করে দেখেছেন।

তিনি সারাজীবন কোনো চাকরি করতে পারেননি! কোনো ব্যবসা করতে পারেননি। তিনি সারাজীবন তাঁর স্ত্রীর আয়ের ওপর চলেছেন।

তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম একবার নির্বাচন করতে ফরিদপুর এসেছিলেন। তখন জসীম উদদীন তাঁর ছাত্র। জসীম উদদীন তাঁকে বলেছিলেন, আপনি তো কবি, নির্বাচন করবেন কীভাবে! তখন নজরুল হেসে বলেছিলেন, আমাকে যারা সমর্থন করেন, তারা পোস্টার বিলিয়ে জানিয়েছেন, ‘যারা নজরুলকে ভোট দেবেন না, তাদের ইসলাম থেকে নাম কাটা যাবে’।

তিনি বলেন, সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজরা যখন পরাজিত করেছিল, তার এত বছর পর্যন্ত আমরা কিন্তু কোনো প্রতিশোধ নিতে পারিনি। কিন্তু নজরুল যা করেছেন, তা এত ওপরে অবস্থান করে যে, তিনি এভারেস্টের চূঁড়ায় উঠে আছেন।

তিনিই একমাত্র কবি, যিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে এমন এক সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি সত্যি অসাম্প্রদায়িক কবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। তিনি মুসলমানদের জন্য এমন সব গান গজল লিখেছেন, যা ইসলামের বহু মাওলানারা পর্যন্ত লিখতে পারেননি। এমন কী হিন্দুদের জন্য শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন, তা কেউ কোনোদিন লিখতে পারেননি। নজরুল সাধারণ মানুষের জন্য লিখেছেন!

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন ‘অগ্নিবীণা’র চেয়ারম্যান এইচ এম সিরাজ। তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২৪ মে ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলামকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়। ৩০ বছর আগে নির্বাক হওয়া কবিকে বঙ্গবন্ধু তড়িঘড়ি করে কেন এনেছিলেন, তা অবশ্যই গবেষণার দাবি রাখে!

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বপথের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট নজরুল অনুরাগী এ. এফ. এম. হায়াতুল্লাহ।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন, নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নজরুল অন্তপ্রাণ মোহম্মদ জাকীর হেসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও কবি আমিনুল ইসলাম, ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে আসা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রখ্যাত নজরুল গবেষক জয়নুল আবেদীন, ‘বাঁশরী’ নামে সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী ড. খালেকুজ্জামান, অনন্য শিক্ষাবিদ ড. সাধন কুমার বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. আবুল আজাদ, ড. শহীদ মঞ্জু, ড. ইফতেখার আলম ফয়াদ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আঞ্জুমান আরা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জেহাদউদ্দীন এবং 'অগ্নিবীণা'র ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর